ছাত্র-জনতার ডাকা ৭২ ঘন্টা অবরোধের শেষ দিনে সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

0

সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্প্রতি পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকা ৭২ অবরোধের শেষ দিনে আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪) বিকালে রাঙামাটির সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে অবরোধ সমর্থনকারী ছাত্র-জনতা। সমাবেশ থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টায় অবরোধ কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সেনা-সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ওপর হামলা, দোকানপাট-ঘরবাড়ি ও বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট,খাগড়াছড়ি পৌর এলাকা নারানহিয়া-উপালি পাড়া-স্বনির্ভরে সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিতে হত্যা, জখমের প্রতিবাদে এবং হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত  পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের জানমাল নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার (২১-২৩ সেপ্টেম্বর) অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।


উক্ত কর্মসূচির সমর্থনে বাঘাইছড়ি-সাজেকের ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফুর্তভাবে ২১-২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাজেক পর্যটন সড়কের উজোবাজার, শুকনোছড়া, মারিশ্যা ১২ কিলোসহ বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করে অবরোধ কর্মসূচি সফল করেন।

আজ (২৩ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন জায়গা থেকে সর্বস্তরের বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা সাজেকের বিভিন্ন স্থানে পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। তারা ভোরে পর্যটন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদী শ্লোগানের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। দিন গড়িয়ে বিকাল ৩টার সময় সকাল থেকে জড়ো হওয়া পিকেটার ও ৫০০ শ’র অধিক এলাকার সাধারণ ছাত্র-জনতার অংশগ্রহনে উজো বাজারে একটি মিছিল বের করা হয়। পরে ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে শিক্ষার্থী উতল চাকমার সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি বীর চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা সহ-সভাপতি ভবান্তর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সহসম্পাদক অর্চনা চাকমা, সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবু ধন চাকমা, ৩৬নং সাজেক ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার পরিচয় চাকমা, ইউপিডিএফের সংগঠক কালো বরণ চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অমিতা চাকমা।

দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটির সাম্প্রদায়িক হামলা সেনা-সেটলারদের পরিকল্পিত উল্লেখ করে ইউপিডিএফ সংগঠক কালো বরণ চাকমা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাহাড়ি জনগণ আশা করেছিল এই সরকার অন্তত কিছুটা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু বিধিবাম তা আর হয়েনি, উল্টো সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হতে হলো।

তিনি আরো বলেন, দীঘিনালায় পাহাড়িদের দোকানপাট-ঘরবাড়িতে সেটলারদের অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ধন রঞ্জন চাকমাকে হত্যা, একই দিন খাগড়াছড়ি শহরে প্রতিবাদকারী ছাত্র-জনতার ওপর সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিতে জুনান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরার খুন হওয়া এবং পরদিন রাঙামাটিতে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশে সেটলারদের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও এক ছাত্রকে হত্যার ঘটনা ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পাহাড়ি জনগণের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার দায় সরকার কোনভাবেই এড়াতে পাারে না। এ ঘটনার দায় নিয়ে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ইউপি মেম্বার পরিচয় চাকমা বলেন, সম্প্রতি দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। ঘটনার শিকার বহু পরিবারি এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে হতাশায় দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি হামলার শিকার হয়ে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুনর্বাসন ও আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানের দাবি জানান।

সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির নেতা বাবু ধন চাকমা বলেন, যেই সরকার ক্ষমতায় আসুক না কেন,পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে কেন জানি সবাই একই দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে থাকে। ফলে পাহাড়ে হামলা, নিপীড়ন চলতেই থাকে। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

ছাত্র নেতা ভবান্তর চাকমা বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এটি অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ঘটনাবলীরই ধারাবাহিকতা। এ যাবত সংঘটিত গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর বিচার না হওয়ায় উগ্রসাম্প্রদায়কি গোষ্ঠি এসব ঘটনার পূনরাবৃত্তি করছে। আর সরকার-শাসকগোষ্ঠি এসব ঘটনাকে পাহাড়িদের উপর চাপিয়ে দিয়ে হামলাকারীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার জন্য সেনা শাসন প্রত্যাহার ও সেটলারদের সমতলে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানান।

যুব নেতা বীর চাকমা বলেন, পাহাড়ে যখন ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ আন্দোলন করছে, ঠিক সে সময়ই দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সেনা সেটলার কর্তৃক হামলার ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে এই হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি পাহাড়িদেরকে ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে নিপীড়ন-হামলা-খুন বন্ধের দাবি জানান।

শিক্ষার্থী রিপেল চাকমা ৭২ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে এলাকার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সম্প্রতি দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটি হামলায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত  পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং হামলাকারী সেনা-সেটলারদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

শেষে তিনি সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে অবরোধ কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেন এবং সমাবেশ সমাপ্ত করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More