‘জাতীয় অবমাননা দিবসে’ নান্যাচরে আলোচনা সভা ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

0

‘জাতীয় অবমাননা দিবসে’ নান্যাচরে তিন সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।



নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

সোমবার, ১০ ফেব্রয়ারি ২০২৫

‘জাতীয় অবমাননা দিবসে’ রাঙামাটির নান্যাচরে তিন সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) দুপুর ২টায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখাসমূহ নান্যাচর উপজেলার খুল্যাং পাড়ায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এত সহস্রাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা সভার ব্যানারে লেখা ছিল- “জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন ও গ্লানিময় আত্মসমর্পণের ২৭ বছর, শাসকগোষ্ঠীর ইশারায় জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের খেলায় লিপ্ত গণদুশমনদের মুখোশ উন্মোচন করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জোরদার করুন”।

প্রথমে আলোচনা সভা ও পরে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

আলোচনা সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যচর উপজেলা সভাপতি প্রিয়তন চাকমার  সভাপতিত্বে ও পিসিপি নেতা দীপায়ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক  সরল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিপনা চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক বারিঝে চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নান্যচর উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি মিকি চাকমা।

রিপনা চাকমা বলেন, আজকের দিনটি একদিকে বীরত্বপূর্ণ, সাহসিকতার, তেমনি আপোষকামীদের আত্মসমর্পণে কালো অধ্যায়। ১৯৯৪ সালে এই দিনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো প্রশাসনের জারি করা অন্যায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৯৮ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি সন্তু লারমা নিজের একে ৪৭ রাইফেলটি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় কালিমালিপ্ত করেন। সেদিন সন্তু লারমার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনীর ৭৩৯ জন সদস্য সরকারের কাছে অস্ত্র জমা আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সন্তু লারমা শেখ হাসিনার সাথে যে চুক্তি করেছিলেন সেটা ছিল প্রতারণামূলক চুক্তি। সন্তু-হাসিনা উভয়ে জনগণের সাথে প্রতরাণা করেছেন। যদি তাই না হতো তাহলে চুক্তির পরও কেন জুম্মো জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হলো না। এখনো কেন পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে গেলে সেনা চেকপোস্টে হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হতে হয়?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতনের পরও পাহাড়ের পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকারীল সরকারের সময় গত বছর খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। এতে জুনান চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা, ধন রঞ্জন চাকমা ও অনিক চাকমাকে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনার আমরা এখনো কোন বিচার পাইনি।

তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের আর পেছনে যাবার কোন অবস্থা নেই। তাই রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সবাইকে সামিল হবার সময় এসেছে।

নিকন চাকমা বলেন, আজকের দিনটি জাতীয় জীবনে এক অভিশপ্ত দিন। সরকারের সাথে আপোষ চুক্তির মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে এই দিন সন্তু লারমার নেতৃত্বে জেএসএস আত্মসমর্পণ করে জাতির ভাগ্য বিকিয়ে দিয়েছিলেন। তবে সেদিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের অকুতোভয় নেতা-কর্মীরা ‌“আপোষ চুক্তি মানি না, পূর্ণস্বায়তশাসন চাই,  No Full Autonomy, No Rest” লেখা ব্যানার উঁচিয়ে ধরে নতুন করে জাতিকে দিশা দেখান।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ নিজেদের স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা রক্ষার্থে মোঘল, ব্রিটিশদের সাাথে বীরত্বপূর্ণ লড়াই সংগ্রাম করেছে। তারই উত্তরসূরী হয়ে আমাদেরকে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যার ঘটনাসহ ২০১৭ সাালে নান্যাচরে কলেজ ছাত্র রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ঘটনা তুলে ধরেন।

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী পাহাড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে নিকন চাকমা বলেন, অভুত্থান পরবর্তী সমতলের ন্যায় পাহাড়ের শিক্ষার্থীরাও গ্রাফিতি অঙ্কনসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলনে নামেন। কিন্তু জেএসএস জেএসএস নানা তকমা ও হুমকি-ধমকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করে এবং বানচাল করে দেয়।

তিনি সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনি যদি সত্যিকার অর্থে চুক্তি বাস্তবায়ন হোক তা চান তাহলে শাসকগোষ্ঠির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসে এবং আঞ্চলিক পরিষদের গদি ছেড়ে  আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করুন। অযথা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের ন্যায্য আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করবেন না।

ইউপিডিএফ সংগঠক সরল চাকমা বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি সন্তু লারমার নেতৃত্বে জেএসএস’র আত্মসমর্পণ জুম্ম জনগণের জাতীয় জীবনে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এর থেকে উত্তরণের জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। জুম্ম জনগণের ন্যায্য দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।   

সভাপতির বক্তব্যে প্রিয়তন চাকমা বলেন, আপোষ চুক্তি ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জুম্ম জাতির দুঃখ-দুর্দশার জন্য সন্তু লারমাকে আজীবন দায়ভার বহন করতে হবে।

তিনি ছাত্র যুব সমাজকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

আলোচনা সভা শেষে প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের শিল্পীরা প্রতিবাদী গান, নৃত্যু, নাটিকা পরিবেশন করেন।

নাটিকায় তারা ’৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে সন্তু লারমা ও তার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনীর ৭৩৯ জন সদস্যের অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরেন এবং সেদিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেদ করে পিসিপি, পিজিপি, এইচডব্লিউএফ’র নেতৃত্বে ‍“No Full Autonomy, No Rest” লেখা ব্যানার প্রদর্শনের দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More