জামিনে কারামুক্ত হলেন রিংরং ম্রো

কারামুক্তির পর রিংরং ম্রো
বান্দরবান, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
বান্দরবানের লামায় ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়েরকৃত মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটক ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক রিংরং ম্রো জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলায় আদালত জামিন মঞ্জুর করলে আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ ২০২৫) তিনি বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিনা ওয়ারেন্টে সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ সদস্য তাকে জোরপূর্বক গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
রিংরং ম্রো লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির একজন সংগঠক। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখল প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
যেসব মিথ্যা মামলায় রিংরং ম্রো’কে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানো হয় সেগুলো হলো- সিআর ৩১৩/২২, সিআর ২৯২/২২, সিআর ১২৯/২৪।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সর্বশেষ সিআর ১২৯/২৪ মামলাটি লামা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন মঞ্জুর করে। এর আগে অপর দু’টি মামলায়ও তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন।
রিংরং ম্রো’কে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে লামার লাংকম পাড়ায় লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কাউখালিতে ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনগুলো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
রিংরং ম্রো’র মুক্তির দাবিতে বান্দরবানে বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএসএ) প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করে। এছাড়া জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে প্রবাসী জুম্মোদের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও রিংরং ম্রো’র মুক্তির দাবি জানানো হয়।

যেভাবে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা রিংরং ম্রোকে গ্রেফতার করেছিল।
উল্লেখ্য, রিংরং ম্রোকে আটকের পরবর্তী গত ১৮ মার্চ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়েরকৃত একই মিথ্যা মামলায় লামা উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন চাইতে গেলে আদালত রেংয়েন ম্রো কার্বারি, রেংয়ুং ম্রো, দুইথং ম্রো ও কাদিং ম্রো’কে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। গত ২৫ মার্চ তারাও কারাগার জামিনে থেকে মুক্তি পান।
প্রসঙ্গত, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগীতায় রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়া, লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়ায় ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখল করার ষড়যন্ত্র করছে। এ লক্ষ্যে এ পর্যন্ত কোম্পানিটির লেলিয়ে দেয়া লোকজন কর্তৃক ম্রো-ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের জুমভুমি পুড়িয়ে দেয়া, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, কলাবাগান-সবজি খেত ধ্বংস করে দেয়া, পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ, বৌদ্ধ বিহারে হামলা-ভাঙচুর, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটক ইত্যাদি ঘটনা সংঘটিত করে আসছে।
গত বছর ১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্য রাতে রাবার কোম্পানির লেলিয়ে দেয়া লোকজন কর্তৃক ম্রো পাড়াবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দু’দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এছাড়া এ ঘটনা তদন্তে তৎসময়ে সংসদীয় একটি প্রতিনিধিদলও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিল। কিন্তু ম্রো-ত্রিপুরা পাড়াবাসী সুরক্ষার বদলে এখনো নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।