ইউপিডিএফ’র মাসিক মানবাধিকার রিপোর্টের তথ্য

জুন মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫ জনকে হত্যা, গ্রেফতার ১৪ জন

0

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রামে গত জুন মাসে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, জেএসএস সন্তু গ্রুপ ও ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী কর্তৃক বিচার বহির্ভুতভাবে ৫ জন হত্যার শিকার হয়েছেন এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন অন্তত ১৪ জন বম জনগোষ্ঠির লোক।

গত ২ জুলাই ২০২৪ প্রকাশ করা ইউপিডিএেফের মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেলের মাসিক রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে।

উক্ত রিপোর্টে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিচার বহির্ভুত হত্যা, গ্রেফতার, হয়রানিসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। জুন মাসে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল বান্দরবানে।

কেএনএফ বিরোধী রাষ্ট্রীয় যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানে জুন মাসে বান্দরবানে বিচার বহির্ভুত হত্যার শিকার হন ২ জন এবং গ্রেফতারের শিকার হন অন্তত ১৪ জন। 

হত্যার ঘটনাগুলোর মধ্যে ১২ জুন রুমায় জুরভারাং পাড়া এলাকায় ভানলাল খিয়াং বম নামে একজন ও ২৬ জুন রুমা-থানাচি সীমান্তবর্তী এলাকায় সিমত্লাপি পাড়া এলাকায় লালঅপ লিয়ান বম নামে আরো একজন হত্যার শিকার হন।

এতে বলা হয়, গত ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর রুমা থানায় ১৪টি, থানচি থানায় চারটি, বান্দরবান সদর থানায় একটি এবং রোয়াংছড়ি থানায় তিনটি মোট ২২টি মামলা দায়ের করা হয়।

উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৭ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচিসহ আশে-পাশের এলাকায় কেএনএফ বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। মূলত বম জাতিসত্তার জনগণ হলো তাদের অভিযানের লক্ষ্যবস্তু। যৌথ বাহিনী নারী—শিশুসহ লোকজনকে নির্বিচারে গ্রেফতার, আটক, হয়রানি ও এমনকি বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করছে। চলমান এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ১০৯ জন নারী—পুরুষকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ এবং ১৬ জনকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০০ জন বম নারী—পুরুষ—শিশু তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতের মিজোরামে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বমদেরকে ভাতে মারার জন্য ৫ কেজির অধিক চাল ক্রয় ও বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

জেএসএস সন্তু গ্রুপ কর্তৃক সংঘটিত ঘটনার বিবরণে রিপোর্টে বলা হয়, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ি। সমিতি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের কথা বললেও বাস্তবে এ নিয়ে তাদের কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। বরং তাদের অধিকাংশ কার্যক্রম ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়ে থাকে।

জুন মাসে সন্তু লারমার জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বরুণ বিকাশ চাকমা নামে ইউপিডিএফ সমর্থক এক ব্যক্তিকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। গত ৮ জুন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থানরত জেএসএস নেতাদের আশ্রয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া রাঙামাটির লংগদুতে জেএসএস-এর এক চাঁদা কালেক্টর হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রকাশিত কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবসের প্রচারপত্র ছিনিয়ে নেয়।

রিপোর্টে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত খুন-অপহরণসহ নানা অপকর্মের বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকিসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত হচ্ছে।

গত জুন মাসে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফের একজন সাবেক কর্মীসহ ২ জনকে খুন, ২ জনকে জিম্মি করে মারধর-মুক্তিপণ আদায় করে এবং বিক্ষোভরত জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

সশস্ত্র হামলার ঘটনাটি ঘটেছে ১৮ জুন ২০২৪ তারিখে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাটে। বেশ কয়েকদিন ধরে ঠ্যাঙাড়েরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ছত্রছায়ায় বাঘাইহাট বাজারে অবস্থান করে জনগণের ওপর নিপীড়ন, অত্যাচার চালালে ঐদিন এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা সংগঠিত হয়ে বাঘাইহাট বাজারে ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে ঠ্যাঙাড়েরা জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে এবং এতে শান্তি পরিবহনের কর্মচারী মো. নাঈম গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যান। এ হামলায় আরো অন্তত ১৩ জন আহত হন।

এছাড়া রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহযোগীতায় ঠ্যাঙাড়েরা খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাটে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার করে।

নারী নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, গত জুন মাসে নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১টি। রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মো. মামুদুল হক নামে এক ব্যক্তি উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। ঘটনার পর সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত সেনা সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More