জেএসএস সন্তু গ্রুপের সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রতি একটি ক্ষুদ্র পরামর্শ

0


লেখা: সচিব চাকমা, সিনিয়র সদস্য, ইউপিডিএফ, কেন্দ্রীয় কমিটি

———————————————————————–———–

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মনে করা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের ওপর অত্যাচার কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু সে আশায় গুঁড়ে বালি। পরিস্থিতি আগের মতোই আছে। এর কারণ হলো মূলত: দু’টি। এক – ঢাকায় যে সরকারই আসুক, পার্বত্য চট্টগ্রামের আসল শাসক সেনাবাহিনীর কোন বদল হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে তারাই সর্বেসর্বা। দ্বিতীয় কারণ হলো, আঞ্চলিক পরিষদে টিকে থাকার জন্য জেএসএস সন্তু গ্রুপের নেতা সন্তু লারমার সেনা শাসকগোষ্ঠীর দালালি। মূলতঃ এই দু’টি কারণে সেনাবাহিনীর শাসন-নিয়ন্ত্রণ-অত্যাচার এবং সেই সাথে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত অভ্যুত্থানের পরও এখনও অব্যাহতভাবে চলছে।

দুনিয়ায় কোন কিছু মাগনা নয়। There is no such thing as free lunch. সন্তু লারমাকেও মাগনা বা এমনি এমনি আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে গত ২৭ বছর ধরে এক নাগাড়ে বসিয়ে রাখেনি সেনা শাসকরা। এখানে অবশ্যই গিভ এন্ড টেক বা দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আঞ্চলিক পরিষদে থাকার বিনিময়ে সন্তু লারমাকে সেনা শাসকগোষ্ঠীকে যা দিতে হয় তা হলো ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। নিজের জাতির ভাইয়ের রক্ত ঝরাতে পারলেই সন্তু বাবুর আঞ্চলিক পরিষদে থাকা নিশ্চিত হয়। এক কথায়, আমরা জুম্মরা নিজেদের জীবন বলি দিয়ে সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে রাখতে বাধ্য হচ্ছি। তাকে ক্ষমতাহীন আঞ্চলিক পরিষদে সুখে রাখার জন্য নিজেরা মারামারি করে জীবন শেষ করছি। আজ সন্তু বাবু যদি সংঘাত বন্ধ করে জুম্মদের ঐক্যবদ্ধ করে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনে নামেন, তাহলে কালই সরকার অর্থাৎ সেনাবাহিনী তাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে লাথি মেরে বিদায় করে দেবে।

মোট কথা, জুম্ম জাতির স্বার্থ আর সন্তু লারমার স্বার্থ আর এক নেই। সন্তু-ভিক্টর-বুলবুলের স্বার্থ এখন সেনা-শাসকগোষ্ঠীর সাথে একাকার হয়ে গেছে। যারা এই সত্য দেখতে পায় না, তারা রাজনৈতিকভাবে অন্ধ। তাই জেএসএস সন্তু গ্রুপের মধ্যে যারা জুম্ম জাতির স্বার্থের কথা ভাবেন, তাদের উচিত শ্বশুর-জামাই-নাতির দল ত্যাগ করা। সেনা-শাসকদের দালাল সন্তু-ভিক্টর-বুলবুলের জন্য জীবন দিয়ে আপনাদের কোন লাভ নেই। জীবন দিতে হলে জুম্ম জাতির স্বার্থে সেনা-শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিন। জুম্ম জাতির শত্রু সেনাশাসকদের স্বার্থে সন্তু বাবুদের পক্ষে যুদ্ধ করে নিজেদের কলঙ্কিত করবেন না, জীবন শেষ করবেন না। 

জেএসএস সন্তু গ্রুপের মধ্যে সবাই যে সংঘাত চায় তা নয়। তাদের মধ্যে যারা ইউপিডিএফের সাথে বিশেষভাবে সংঘাত চায় তারা হলেন সন্তু লারমা নিজে ও তার নিকট আত্মীয় স্বজন: তার জামাই প্রণতি বিকাশ চাকমা ওরফে ভিক্টর ও তার নাতি (ভিক্টরবাবুর ছেলে) বুলবুল। এরাই উগ্রভাবে ইউপিডিএফের সাথে সংঘাতের পক্ষে এবং ঐক্যের বিপক্ষে। বাকিরা অধিকাংশ, বিশেষত সাধারণ নেতাকর্মীরা ঐক্য চায় এবং ইউপিডিএফের সাথে সংঘাত চায় না। তারা নানা কারণে ইউপিডিএফের সাথে মারামারি করতে বাধ্য হচ্ছে।

সন্তু গ্রুপের শ্বশুর-জামাই-নাতি চক্র (সন্তু-ভিক্টর-বুলবুল) সাধারণ নেতাকর্মীদের ভুল বোঝাচ্ছে এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়াতে তাদেরকে বাধ্য করছে। এভাবে তারা জুম্ম জাতি ও জনগণের চরম সর্বনাশ করে চলেছে।

কিন্তু ক্ষমতা-বল চিরস্থায়ী নয়। হাওয়া পরিবর্তন হয়। সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করেও হাসিনা টিকতে পারেনি। আর সন্তু গ্রুপের শ্বশুর-জামাই-নাতি চক্র কোন ছাড়! তারা আসলে জুম্ম জাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে নিজেদের ধ্বংসই ডেকে আনছে। আর তাদের সেই ধ্বংস খুব বেশি দেরী নেই।

মোট কথা, জুম্ম জাতির স্বার্থ আর সন্তু লারমার স্বার্থ আর এক নেই। সন্তু-ভিক্টর-বুলবুলের স্বার্থ এখন সেনা-শাসকগোষ্ঠীর সাথে একাকার হয়ে গেছে। যারা এই সত্য দেখতে পায় না, তারা রাজনৈতিকভাবে অন্ধ। তাই জেএসএস সন্তু গ্রুপের মধ্যে যারা জুম্ম জাতির স্বার্থের কথা ভাবেন, তাদের উচিত শ্বশুর-জামাই-নাতির দল ত্যাগ করা। সেনা-শাসকদের দালাল সন্তু-ভিক্টর-বুলবুলের জন্য জীবন দিয়ে আপনাদের কোন লাভ নেই। জীবন দিতে হলে জুম্ম জাতির স্বার্থে সেনা-শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিন। জুম্ম জাতির শত্রু সেনাশাসকদের স্বার্থে সন্তু বাবুদের পক্ষে যুদ্ধ করে নিজেদের কলঙ্কিত করবেন না, জীবন শেষ করবেন না। #

* লেখাটি ইউপিডিএফের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More