ঢাকায় ইউপিডিএফ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিন সংগঠনের আলোচনা সভা

0

ঢাকা ।। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় তিন সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ সকাল ১১টায় ঢাকায় পলাশী মোড় এলাকার একটি হল রুমে বৃহত্তর পাবর্ত চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ) এই সভার আয়োজন করে।

সভায় তিন সংগঠনেরে নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জাতিকে শোষণ-শাসনের হাত থেকে মুক্ত করতে ও অধিাকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে সমবেত হয়ে লড়াই সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘হয় পূর্ণস্বায়ত্তশাসন নয় আত্মবিনাশ, সংগ্রামই মুক্তির পথ’ এই স্লোগানে এবং ’নতুন যুগের বিপ্লবীরা এগিয়ে এসো, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে সমবেত হও’ এই আহ্বানে আলোচনা সভায় ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে ও পিসিপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শুভাশীষ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীতি চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক অর্ণব চাকমা প্রমুখ।।

ছাত্র নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিসত্তার অধিাকর প্রতিষ্ঠার লক্ষে তৎকালীন জনসংহতি সমিতি প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল কিন্তু একটা পর্যায়ের গিয়ে জেএসএস সরকারের সাথে ‘পার্বত্য চুক্তির’ সম্পাদন করে। জেএসএস যে স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম করেছিল সেটি ব্যর্থ হয়েছে, জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। চুক্তির পরবর্তীতে পাহাড়ে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। দিশেহারা জনগণকে নতুন করে জাগাবার জন্য ও শাসকের পরাধীনতা হাত থেকে মুক্ত করবার জন্য তখনকার পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি গণপরিষদ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে নতুন আলোর সন্ধানে পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়া যুগে নয়া পার্টি ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গঠিত হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে চড়াই-উতরাই, বহু ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখী হয়েছে। ২৩ বছরে আন্দোলনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও জাতীয় বেঈমান-প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিপক্ষদের দ্বারা দমন-পীড়ন, নির্যাতন, গুম,খুন, হত্যাসহ সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। শত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে গণতন্ত্র, সমতা এই মতাদর্শকে লালন করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রামী সহযোদ্ধারা পার্টি অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মহান এই পার্টি’র অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে ৩ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আত্ম উসৎর্গ করে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে অনেকেই, শাসকগোষ্ঠীর হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় এখনো বহু নেতা-কর্মীকে এখনো কারাবরণ করতে হচ্ছে। মহান এই দিনটিতে আমরা সেসকল বীর যোদ্ধাদের প্রতি গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধার জানাই। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময় এই পার্টি অগ্রযাত্রা আরো সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যারা শাসন কর্তা তারা যুগে যুগে বিপ্লবীদের ধ্বংস করতে নানান ষড়যন্ত্র করেছিল, নিপীড়িত মানুষষের প্রতি অমানবিক দমন-পীড়ন, নির্যাতন করা হয়েছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তারা ধ্বংস হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয় ৯০ দশকে তিন সংগঠনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে প্রতিহত করতে তৎকালীন খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার কর্র্ণেল ইব্রাহিম ও মেজর মাহবুব নেতৃত্বে পাহাড়িদের সমাজ চ্যূত ব্যক্তিদের দিয়ে মুখোশ, ঠ্যাঙার, গপ্রক বাহিনী ও লায়ন বাহিনী সৃষ্টি করেছিল। ২০০৯ খাগড়াছড়ি লক্ষ্মীছড়িতে বোরখা বাহিনী সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের হত্যা-গুম-খুন করেছিল। পাহাড়ি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হস্তক্ষেপ করতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে গণবিরোধী ‘‘১১ দফা’’ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পাহাড়ে সেনা-শাসনকে বৈধ্যতা দিয়েিেছল। ২০১৪ সালের পরবর্তীতে ইউপিডিএফ-জেএসএস একটি সমঝোতার মাধ্যেমে পাহাড়ে সংঘাত নিরসন হলে ২০১৭ সালে নভেম্বরে নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে আরো নতুন করে সংঘাত বাধিয়ে দিয়ে হত্যা-খুন-গুম-অপহরণ পরিচালনা কর্মকান্ড অব্যহত রেখেছে। পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি জনগণের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের মাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সে সকল কর্মকান্ডকে নিন্দা জানাই

তিনি সংগ্রামের দিনগুলোর স্মরণ করে বলেন, পাহাড়ি জনগণ আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য যুগে যুগে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। মুঘল-ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধ করে নিজেদের শাসন বজায় রেখেছিল, ৯০ দশকের তিন সংগঠনের গণআন্দোলন সংঘঠিত হয়েছিল, ইউপিডিএফ গঠনের পরবর্তীতে ৭ মার্চ ২০১৮ খাগড়াছড়ি স্বনির্ভর বাজারে সেনা-পুলিশের সাথে প্রতিরোধ সংগ্রাম ও দীঘিনালা বাবুছড়া, গুইমারা বড়ইতলী, আলুটিলা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় জনগণের ভূমি রক্ষার আন্দোলনে সফল করেছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সাজেক উজোবাজার, ঘিলাছড়িতে প্রতিবাদী নারীরা সংগঠিত হয়ে সেনাবাহিনীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

তিনি, পাহাড়ে সকল সংগ্রামী জনতা ও ছাত্র-যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার, জাতীয় দালাল-প্রতিক্রিয়শীলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে আহ্বান জানান।

সভায় নারী নেত্রী নীতি চাকমা বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কর্তৃক পাহাড়ে প্রত্যেক ঘটনায় নারীরা নিষ্পেষনের শিকার হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ওপর চালানো ডজনের অধিক গণহত্যার সময়ে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সরকারে সাথে জেএসএস সশস্ত্র যুদ্ধ চলাকালীন পাহাড়ি নারীরা ধর্ষণ-হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তিনি এসব ঘটনাকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাক বাহিনী কর্তৃক এদেশের মা-বোনের সম্ভ্রমহানির সাথে তুলনা করেন।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে প্রতিটি ঘটনায় ইউপিডিএফ’র সাথে সম্পৃক্ত থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন সংগ্রাম করেছে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে সেনাবাহিনী অপহরণ করেছিল বর্তমানে আমরা তার হদিস পাইনি। তার বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের নারী সহযোদ্ধাদের কারাবরণের শিকার হতে হয়েছিল। আগামীতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লড়াই সংগ্রাম করবে বলে দৃঢ় ব্যত্তয় প্রকাশ করেন।

প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, পাহাড়ি জনগণের জীবন যাপন যেখানে বিপন্ন সেখানে সমতলে আমরা যারা আছি ব্যক্তিগত চিন্তায় নিমজ্জিত থাকলে চলবে না। আমাদেরকে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে, শ্রমিক শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।

অর্ণব চাকমা বলেন, পাহাড়ি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তাঁদের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতিগত নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। বরকল ঠেগামুখ, সাজেক, নারাইছড়ি, রামগড়, মাটিরাঙ্গায় রাস্তা নিমার্ণ করে উদ্ভোদ্ধ পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ করে রাখার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপন্ন করে রাখা হয়েছে, পাহাড়ে শিক্ষার্থীরা মান সম্মত শিক্ষা অর্জন করতে পারেছেনা। ফলে তাঁরা প্রতিযোগীতায় অন্যদের সাথে টিকতে পেরে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া লেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে সরকার পাহাড়িদের জন্য বরাদ্ধকৃত কোটাতে সমতলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের ভর্তি সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। তিনি, সচেতন হয়ে সরকার শাসক গোষ্ঠীর সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More