ঢাকায় ইউপিডিএফ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
Dhaka UPDF prgmm, 30 dec 2015ঢাকা: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ঢাকায় ইউপিডিএফ-এর কার্যালয়ে  আনন্দঘন পরিবেশে প্রীতিভোজ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকায় কর্মরত ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পিসিপি ও এইচডব্লিউএফ-এর নেতা-কর্মীগণ অংশ নেন। অতিথি হিসেবে মধুপুর থেকে গারো ছাত্রও অংশগ্রহণ করেছেন। অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন সদ্য কারামুক্ত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলন সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী বীর শহীদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে সকাল ১০:৩০ থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের উপযোগী করতে আগের দিন পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ রাত পর্যন্ত কার্যালয় গুছিয়ে ঠিকঠাক করে ফেলে। সকালে কার্যালয় ছিল সাজানো গুছানো। রেকর্ড প্লেয়ার থেকে বেজে আসছিল বিপ্লবী গণসঙ্গীত। পুরো অফিস জুড়ে বিরাজ করছিল বিপ্লবী উদ্দীপনা। নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে পৌঁছলে বিপ্লবী সঙ্গীত থেমে যায়। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক পিসিপি’র সভাপতি সিমন চাকমা সমাগত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দিবসটির কর্মসূচি সম্পর্কে ধারণা দেন। আগত প্রতিনিধি ও অতিথিদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা।

সকালে অফিস সাজানোর দৃশ্য। ছবিতে পিসিপি সভাপতি বিপুল, সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাকে দেখা যাচ্ছে...
সকালে অফিস সাজানোর দৃশ্য। ছবিতে পিসিপি সভাপতি বিপুল, সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাকে দেখা যাচ্ছে…

সভায় পার্টির প্রতিনিধি তার বক্তব্যে দেশীয় পরিস্থিতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন সংগ্রাম বিষয়ে ধারণা দেন। জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ছাত্র-যুবকদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা কেরাণী তৈরির উপনিবেশিক ধাঁচে প্রণীত মন্তব্য করে পার্টি প্রতিনিধি বলেন, এ শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করলেও সমাজ ও জাতির উপকারে আসে না। তথাকথিত শিক্ষিতরা জনগণের শত্রু অত্যাচারি শাসকের সেবাদাস হিসেবে গড়ে ওঠে। এরা নিজের সমাজ ও জাতির কোন উপকারে আসে না। সরকারের সাথে এদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, আর নিজের সমাজের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। নিজেদের পৈতৃক ভিটেবাড়ি বাস্তুভিটা বেদখল হলেও এরা নির্বিকার থাকে। মিটিঙ মিছিলে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, জাতির বিপদে তারা একটা আঙুলও তোলে না, খরচ করতে চায় না কানাকড়ি। চায় শুধু ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করতে। নিজেদের চোখের সামনে মা-বোনদের সম্ভ্রম হানি হতে দেখেও এরা নির্লিপ্ত থাকে। এরা মানুষ নামের অযোগ্য। বর্তমান পঁচাগলা সমাজে তাদের অর্থ-বিত্ত প্রভাব প্রতিপত্তি যতই থাক, কিংবা বিদ্যা বুদ্ধি যাই থাক, চূড়ান্ত বিচারে তার কোন মূল্য নেই। ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের ক্ষমা করবে না।

ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে পার্টি প্রতিনিধি বলেন, প্রতিটি জাতির বিকাশের একটা পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত হয়েছে। বাঙালি  জাতির মধ্যেও সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল না, রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিল এটাই হচ্ছে সত্য। সত্য ও ন্যায়ের জয় অনিবার্য, মুক্তিবাহিনীই বিজয়ী হয়েছে। রাজাকার আলবদরদের পরাজয় হয়েছে, পাকিস্তানপন্থীদের ফাঁসিও হয়েছে। আলোর বিপরীতে অন্ধকার, প্রগতিশীলের বিপরীতে প্রতিক্রিয়াশীল যুগে যুগে দেখা গেছে, এটাই বাস্তব। দুর্বৃত্তদের ভয় পেলে চলবে না। রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথিতে পূর্ব বাংলার জনগণকে পিষ্ট হতে হতো।

দেয়ালে ইউপিডিএফ'র পতাকা টাঙানো হচ্ছে...
দেয়ালে ইউপিডিএফ’র পতাকা টাঙানো হচ্ছে…

লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে দুর্নীতিতে পাঁচ বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ পঁচাগলা সমাজ সবচে’ বাজে লোকদেরই মনোনীত করবে, সেটাই স্বাভাবিক। পাহাড়িদের মধ্যে যারা ধান্দাবাজ দালাল প্রকৃতির তাদেরই সরকার কোলে তুলে নিচ্ছে। পঁচাগলা শাসকগোষ্ঠীর চোখে যারা গ্রহণযোগ্য বা ভাল বলে বিবেচিত, তারা আসলে সবচে’ খারাপ। টিভিতে যাদের চেহারা দেখানো হয় কিংবা পত্রিকায় যাদের ছবি ছাপা হয়, যাদের নিয়ে পত্রিকার পাতা ভরিয়ে ফেলা হয়, তারা সবাই ভাল লোক নয়–এটা যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে ভুল না করে তিনি সে আহ্বান জানান।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার হচ্ছে সবচে’ ধুরন্ধর প্রকৃতির, এ দল পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর জাতীয় পরিচিতি মুছে দিয়েছে। নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি জোর দেন।

পার্টি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ঘরোয়া সভায় এলাকা ভিত্তিক প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র রিপন চাকমা, কাঁচপুর থেকে আদিত্য চাকমা ও বাসাবো ছাত্রদের পক্ষে সুজীব চাকমা। দুপুরে খাবারের পরও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলে। এতে ঢাকাস্থ শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীগণ তাদের নিজ নিজ সাংগঠনিক বিষয়াদি তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য যে, বড় দিনের ছুটি, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আর ডিওয়াইএফ ও এইচডব্লিউএফ-এর একটি প্রতিনিধি দল সিলেটে চা বাগানের আন্দোলনে সংহতি জানানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের কারণে ২৬ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
——————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More