ঢাকায় মিঠুন চাকমার স্মরণে সংহতি সমাবেশ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

0

ঢাকা : ‘অধিকারহারা নিপীড়িত মানুষের পাশে দাড়ান, মিঠুন হত্যার দাবিতে সোচ্চার হোন!’–এ শ্লোগানে সেনাসৃষ্ট নব্য মুখোশদের গুলিতে নিহত শহীদ মিঠুন চাকমার স্মরণে আজ ১৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সংহতি সমাবেশ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে পিসিপি, ডিওয়াইএফ ও এইচডব্লিউএফ। সমাবেশে ঢাকাস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে সাভার, আশুলিয়া, কাঁচপুর, আদমজীতে কর্মরত শ্রমজীবীরাও অংশ নেন। কুমিল্লা থেকেও তিন জন প্রতিনিধি সমাবেশে যোগ দেন।বিকাল ৩.৩০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশের প্রারম্ভে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অংকন চাকমা। দুর্বৃত্তদের অপতৎপরতা সম্পর্কে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটিকে সহস্তে লেখা মিঠুন চাকমার ৬ ডিসেম্বরের রিপোর্ট পাঠ করে শোনান এইচডব্লিউএফ’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা। উল্লেখ্য ৫ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তরা মিঠুন চাকমাকে অপহরণের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে শহীদ মিঠুন চাকমা’র স্মরণে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।পিসিপি-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি সদস্য রাকিব পারভেজ, একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সাজেদ রোমেল, সরকার আল ইমরান (যুগ্ম আহব্বায়ক বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য ফোরাম), লিটন নন্দী (বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন), ফয়সাল মাহমুদ (সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন), নাসির উদ্দিন প্রিন্স (সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট), সালমান সিদ্দিকি (সাধারণ সম্পাদক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাবি শাখা), ইকবাল কবির (সভাপতি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী), রিপন চাকমা (কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ডিওয়াইএফ) এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী নিরূপা চাকমা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সাভার প্রবাসী শ্রমজীবী ফ্রন্ট এর সভাপতি প্রমোদ জ্যোতি চাকমা। বিশেষ বার্তায় সমাবেশের সাথে সংহতি জানান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি এবং সরাসরি উপস্থিত থেকে সংহতি জানান লেখক আলতাফ পারভেজ। সভা সঞ্চালনা করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ:সভাপতি বিপুল চাকমা।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ফয়জুল হাকিম তার বক্তব্যে বলেন, শহীদ মিঠুন চাকমা ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের ভূমি অধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকার আদায় এবং পাহাড় কিংবা সমতল সকল নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলতেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অপারেশন উত্তরণের নামে সেনা শাসন প্রত্যাহার করা এবং মিঠুন চাকমা খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির জোর দাবি জানান।

বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য ফোরাম এর যুগ্ম আহব্বায়ক সরকার আল ইমরান তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রকে দেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু জাতিসমূহ এবং শ্রমিক মেহনতী জনগণ নির্যাতনের কারাগারে পরিণত করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা হয়। তিনি এই হত্যাকা-ের জন্য রাষ্ট্রকেই দায়ী করেন।শহীদ মিঠুন চাকমার স্মৃতিচারণ করে একুশে টিভির সিনিয়র রিপোর্টার সাজেদ রোমেল বলেন, দুর্বৃত্ত দ্বারা নিহত শহীদ মিঠুন চাকমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায়ও ছিলেন অন্যায়ের প্রতিবাদে এক বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিটি মিছিল ও সমাবেশের পরিচিত মুখ। তিনি ছিলেন নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সদা সচেষ্ট এবং প্রগতিশীল চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ এক ব্যক্তিত্ব। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই সংগ্রামী চেতনায় ছিলেন অবিচল ও অনড়।

ব্যরিস্টার সাদিয়া আরমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত কালে সংঘটিত সকল হত্যাকা-সহ অতিসম্প্রতি সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রমেল ও মিঠুন চাকমার চিহ্নিত হত্যাকারীদের ইন্ধনদাতা কতিপয় অসাধু সেনা কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে।ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি সদস্য রাকিব পারভেজ তার বক্তব্যে সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার নামে সেনা শাসন বজায় রাখতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করুন, নয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য অধিকার দিয়ে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করুন।

সংহতি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলে নির্যাতিত জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে নেতৃত্বহীন এবং মেধাশূন্য করার লক্ষ্যেই রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করেন। এদের দিয়েই মিঠুন চাকমাকে দিনে-দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি অবিলম্বে এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান।পরবর্তীতে সংহতি সমাবেশে উপস্থিত সকলেই শহীদ মিঠুন চাকমার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। অনুষ্ঠানের বেদীতে বিশেষভাবে স্থাপিত শহীদ মিঠুনের প্রতিকৃতিসহ তার সংগ্রামী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ছবি সমবেত লোকজনের নজর কাড়ে। শোক বইয়ে মন্তব্য লিখে অংশগ্রহণকারীরা তার প্রতি সম্মান জানান এবং আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

———————————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More