তবলাপাড়া-কালাপানিতে জনতার ওপর সেনা হামলার প্রতিবাদে রামগড়ে লাঠি মিছিল ও সমাবেশ

0


রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ও ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধ কর’ এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে গুইমারার তবলা পাড়া ও কালাপানিতে জনতার ওপর সেনাবাহিনীর হামলা, গুলির্ষণ ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে রামগড়ে লাঠি মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, রামগড় উপজেলা শাখা।

আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় বাটনাতলী মুখ থেকে লাঠি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রামগড় বাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদী শ্লোগানে তৈচাকমা পাড়া এলাকায় গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।


মিছিল পরবর্তী সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি ধনু ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও পিসিপি’র রামগড় উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ধন মোহন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক নতুন ত্রিপুরা।

শান্ত চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল তবলা পাড়ায় জনতার হাতে আটক হওয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের উদ্ধার করতে এসে সেনাবাহিনী প্রতিবাদী জনতারও পর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। এতে প্রমাণ হয়েছে সেনাবাহিনীই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা।

তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী অস্ত্রধারী খুঁজে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি চালায়, ভাঙচুর করে, কিন্তু জনতা অস্ত্রধারী আটক করলে তারা তাদেরকে জোর করে নিয়ে ছেড়ে দেয়। সেনাবাহিনী এই ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। পাহাড়ি জনগণের উপর নৃশংসতা চালাচ্ছে। সেনাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, পাহাড়িদের ভীত সন্ত্রন্ত করে তাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা। সেনাদের লেলিয়ে দেয়া ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা গত ১ সেপ্টেম্বর রামগড়ের নাকাপা থেকে এক নিরীহ ব্যক্তিকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে। কিন্তু অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।


তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, পাহাড়ি যুব সমাজ কোনোদিন মাথা নত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি মহল্লায় তবলা-কালাপানির মতো গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠবে।

অবিলম্বে হামলাকারী সেনাদের শাস্তি এবং তবলাপাড়ায় হামলা করতে আসা অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব।

নতুন ত্রিপুরা উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে তাদের তৈরি ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদ নয়, শ্রমিকরা কাজ করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না—এ কেমন স্বাধীনতা? এ কেমন গণতন্ত্র? পাহাড়ের মানুষের উপর যারা গুলি চালায়, তারা জনগণের শত্রু, মানবতার শত্রু। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই—পাহাড়ি জনগণকে রক্ত দিয়ে হলেও নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে জানে। তাই যারা ভাবছে রক্ত ঝরিয়ে আমাদের আন্দোলন থামানো যাবে, তারা ভুল করছে।’

সঞ্চালনাকালে ধন মোহন ত্রিপুরা বলেন, “গুইমারার তবলাপাড়া ও কালাপানিতে সেনারা সাধারণ মানুষের উপর যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে, তা শুধু অন্যায় নয়, এটি অপরাধও। গ্রামে ঢুকে নিরীহ নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গুলি চালানোর ঘটনার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত সেনা ও তাদের সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়েদের একদিন জনগণের কাঠহড়ায় দাঁড়াতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ধনু ত্রিপুরা দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, “আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি পাহাড়ি জনগণের হুঁশিয়ারি। সেনাবাহিনী যদি জনগণের উপর দমন-পীড়ন, সন্ত্রাস চালানো বন্ধ না করে, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি গ্রামে প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠবে। আমরা আজ ঘোষণা করছি—রক্ত দিয়ে হলেও আমরা ভূমি রক্ষা করবো, অস্তিত্ব রক্ষা করবো, আত্মমর্যাদা রক্ষা করবো। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুব সমাজ কোনো ষড়যন্ত্রে ভীত নয়, কোনো দমননীতিতে থামবে না। তিনি সেনা ও ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, তবলা ও কালাপানিতে জনতার ওপর হামলাকারী সেনা সদস্যদের এবং অস্ত্রধারী ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More