খাগড়াছড়ি আলুটিলায় সেনাবাহিনী কর্তৃক বাড়িঘর তল্লাসী ও গ্রামবাসীদের মারধর!
তিন দিনের মধ্যে ইউপিডিএফ সদস্যদের ধরিয়ে দাও, নইলে গ্রেফতার : সেনাবাহিনী!
খাগড়াছড়ির : খাগড়াছড়ির আলুটিলা পুনর্বাসন এলাকায় সেনাবাহিনী কর্তৃক বাড়িঘর তল্লাসী ও রূপতাই ত্রিপুরা (৩০), পিতা বেনজি মোহন ত্রিপুরা ও শান্তি মনি চাকমা (৪৮), পিতা কালাচান চাকমা নামে দু’জন নিরীহ গ্রামবাসীকে মধ্যরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বেদম মারধর করা হয়েছে। শনিবার (২১ অক্টোবর ২০১৭) দিবাগত রাত আড়াই টা’র সময় এ ঘটনা ঘটে।
উক্ত ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়ে রূপতাই ত্রিপুরার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল। তখনো থামেনি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়া অব্যাহত ছিল। শনের ছাউনি ঘর, একটু বৃষ্টি হলে ঘুমাতে পারি না, চালা ভেদ করে ভেতরে পানি পড়ে। তাই আমার পরিবার নিয়ে বাবার বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ কুকুড়ের ঘেউ ঘেউতে ঘুম ভাঙ্গে। তখন আনুমানিক আড়াইটা বাজবে। এরপর বাড়িটা ঘিরে ফেলা হলো। দরজায় জোরে ধাক্কার শব্দ শুনি। দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করতে থাকে। আমি দরজা খুলে দিই। সাথে সাথে আর্মিরা বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমাদের সকলকে বেড় করে উঠানে নিয়ে লাইনে দাঁড় করানো হয়। এরপর তল্লাসির নামে বাড়ির সকল জিনিসপত্র তছনছ করে দিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়।
বাড়ি তল্লাসি শেষ হলে ইউপিডিএফ-এর সদস্যরা কোথায় রয়েছে তা দেখিয়ে দিতে বলা হয়। আমি জানিনা বললে সাথে সাথে কিল, ঘুষি মারতে লাগলো। পরে লাঠি দিয়েও মারতে শুরু করে। ইউপিডিএফ সদস্যরা আসলে আমদেরকে (সেনাবাহিনী) খবর দাও না কেন? তাঁদেরকে (ইউপিডিএফ) বাড়িতে আশ্রয় দাও কেন? তাঁদেরকে ধরিয়ে দাও না কেন? ইত্যাদি বলে বেদম প্রহার করতে থাকে। মারধরের শেষে আমিসহ বাড়ির সকল সদস্যকে ছবি তোলে এবং ভিডিও করা হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রায় আনুমানিক দেড় ঘন্টা যাবৎ অবস্থান করে চলে যাবার সময় সেনা সদস্যরা আমার ফোন নাম্বারটা নিয়ে যায়। এবং এই বলে হুমকি দিয়ে যায় যে “আগামী তিন দিনের মধ্যে ইউপিডিএফ সদস্যদের ধরিয়ে দিতে না পারলে প্রথমে মেরে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে দেবো তারপর অস্ত্র গুঁজে দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেবো”। আজ সকালেও ফোন করে একই হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান রূপতাই ত্রিপুরা। তিনি সেনাবাহিনীর সাজানো অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারের আতঙ্ক ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে শান্তি মনি চাকমার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তখন সম্ভবত রাত ৩টা বাজবে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার বাড়ি ঘেরাও করা হয়। এরপর বাড়ির সকল সদস্যদের বেড় করে দিয়ে পুরো বাড়ি তল্লাসি চালানো হয়। কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে থালাবাসন কিছুই বাদ যায়নি। সবকিছু মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছে। জুমের ধান কেটে বস্তায় ভরে রেখেছিলাম সেগুলোও পিস্তল খোঁজার নামে সেনাসদস্যরা মাটিয়ে ঢেলে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমি ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। আজ থেকে তিন দিনের মধ্যে ইউপিডিএফ সদস্যদের ধরিয়ে দিতে না পারলে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে সেনাবাহিনী। আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো ভেবে কূল পাচ্ছি না। দেশের একজন নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী হুমকি হয়ে উঠবে, নিরাপত্তাহীনতায় ভূগবে তা মেনে নেয়া যায় না। আমি এর অবসান চাই।
__________
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।