দাবি পূরণ না হলে শীঘ্রই নতুন কর্মসূচি: বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সম্প্রতি দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত হামলার প্রেক্ষিতে উত্থাপিত ৭ দফা দাবি সরকার মেনে না নিলে শীঘ্রই নতুন কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে বলে জানিয়েছে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা।
৭২ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষে আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা এ কথা জানান।
তাদের দাবিগুলো হলো-
১. খাগড়াছড়ি সদর, দিঘীনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার পাহাড়ি অধিবাসীসহ তিন পার্বত্য জেলার জুম্ম জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. জাতিসংঘের তত্বাবধানে ও অংশগ্রহণে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালা হামলার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩. সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে খুন হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. জুম্মদের ক্ষতিগ্রস্থ বৌদ্ধ বিহার পুনঃনির্মাণ ও দোকান-পাট ও বাড়িঘরের মালিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. ঘটনার সাথে জড়িত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেনা-সেটলারদের প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে অবিলম্বে স্বায়ত্তশাসন প্রদানসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিবৃতিতে ৭২ ঘন্টার অবরোধ সফল করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
অবরোধ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবরোধের প্রথম দিনে বিকাল ৫টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের ঠাকুরছড়াতে শান্তিপূর্ণ অববোধ চলাকালীন পিকেটারদের লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী গুলি বর্ষণ করে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তৃতীয় দিনে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে শান্তিপূর্ণ পিকেটিংয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাধা প্রদান করে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই তা প্রমান করে।
বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতার নেতৃত্ববৃন্দ অবিলম্বে উক্ত ৭ দফা দাবিনামা মেনে নেয়ার জন্য অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অংকন চাকমা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে মোটর সাইকেল চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মো. মামুন নামে এক বাঙালির মৃত্যুর অভিযোগ করে সেটলার বাঙালিরা গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুরে পাহাড়িদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। এর জের কাটতে না কাটতে পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে সেটলাররা মিছিল সহকারে এসে দীঘিনালা সদরের বাসস্টেশন ও লার্মা স্কোয়ারে পাহাড়িদের ওপর হামলা ও দোকানপাট-ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে কয়েকজ পাহাড়ি আহত হন। এদিন সেনাবাহিনীর অত্যাচরে গুরুতর আহত হয়ে ধন রঞ্জন চাকমা নামে একজন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মারা যান।
অপরদিকে একইদিন রাতে খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া, উপালি পাড়া ও স্বনির্ভর এলাকায় দীঘিনালা হামলার প্রতিবাদকারী ছাত্র-জনতার ওপর সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে জুনান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরা নামে দু’জন নিহত হন ও অনেকে গুরুতর আহত হন।
উক্ত দুই ঘটনার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা রাঙামাটি সদরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে সেখানেও সেটলার বাঙালিরা হামলা চালায়। এতে অনিক চাকমা নামে এক ছাত্র নিহত হয় ও অন্তত ৫৫ জন আহত হন বলে জানা যায়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও একটি বৌদ্ধ বিহারে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।