দীঘিনালায় আগ্রাসন বিরোধী শিশু-কিশোরদের ‘প্রতীকী প্রতিরোধ মহড়া’ ও আলোচনা সভা

প্রতীকী প্রতিরোধ মহড়ার মাধ্যমে শিশু-কিশোররা পার্বত্য চট্টগ্রামে আগ্রাসনকারী বেলুচ রেজিমেন্ট সৈন্যবাহিনী ও দালালদের কুশপুত্তলিকায় আক্রমণ করেন।
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ’৪৭-এ বেলুচ রেজিমেন্টের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শিশু-কিশোরদের প্রতীকী প্রতিরোধ মহড়া ও আলোচনা সভা, ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধের বীর রুণু খাঁর অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্প অর্পণ এবং নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার (১ সেপ্টেম্বর ২০২৪) বিকাল ৩টার সময় ‘আত্মশক্তি জাগরণ ফোরাম ২০২৪’ এর ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে ২ শতাধিক ছাত্র-যুবক সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহন করেন।
শুরুতে ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধের বীর রনু খাঁ’র স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধের বীর রুণু খাঁর স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের যারা শহীদ হয়েছেন এবং হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন ও নিরবতা পালন শেষে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দায়-দায়িত্ব ও ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভা শেষে শিশু-কিশোরদের প্রতীকী প্রতিরোধ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় গৌতম চাকমার সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, বিশিষ্ট মরুব্বি দীপু লাক্ষ চাকমা ও আনন্দ মোহন চাকমা এবং ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি রিকন চাকমা ও মেনাকি চাকমা।

সভায় ইউপিডিএফ নেতা মিল্টন চাকমা বলেন, ১৯৪৭ সাালে পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারায় পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট বিনা বাধায় পার্বত্য চট্টগ্রাম দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও সে সময় স্নেহ কুমার চাকমা, ঘনশ্যাম দেওয়ান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুণু খাঁ’র যেভাবে প্রতিরোধ লড়াই করেছিলেন, বেলুচ রেজিমেন্টের আগ্রাসনের সময় পাহাড়িরা কোন প্রতিরোধই করতে পারেনি। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়।
তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা খুন-গুম-নির্যাতন চালিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল, যা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ছাত্র সমাজ শত খুন-নিপীড়নেও মাথা নত করেনি, বরং রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে হাসিনাকে পতন ঘটিয়েছে। আর এই আন্দোলনে পাহাড়ের ছাত্র সমাজও সামিল হয়েছে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন প্রজন্মকে হাসিনা পতন আন্দোলন থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের ছাত্র সমাজকে ঘরে বসে থাকলে হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অন্যায়-অবিচার চলছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মিল্টন চাকমা বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পাহাড়ি ছাত্র সমাজ নিজেদের উদ্যোগে যে আন্দোলন সংগঠিত করছে তার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি ধন্যবাদ জানান। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ছাত্র সমাজকে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।
আনন্দ মোহন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের রয়েছে বীরত্বের ইতিহাস। ব্রিটিশরা মাথা নত করাতে পারেনি। কিন্তু আদিকাল হতে পাহাড়িরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করলেও এখনও কোন সুখ-শান্তি পায়নি। ব্রিটিশ শাসনের পর পাকিস্তান আর পাকিস্তান শাসনের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী নিপীড়ন থেকে মুক্তি পায়নি। সবসময় পাহাড়িদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি সবাইকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতির রক্ষার্থে, জনসাধারণের স্বার্থে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জাতিকে রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প নেই।
দীপুলাক্ষ চাকমা বলেন, ‘৪৭ সাল গেলো, ৬০ সাল এলো কাপ্তাই হ্রদ নির্মাণ করা হলো। হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হলো। ‘৭১ সালের পর আরো অনেক কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। বর্তমান ঘটনাগুলো আরো করুণ। শেখ মুজিব পাহাড়িদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে পাহাড়িরা আন্দোলনে নামে। গঠিত হলো শান্তি বাহিনী। ’৯৭ সালে চুক্তি হলো সরকারের সাথে। জেলা পরিষদ গঠন হলো। কিন্তু পাহাড়ি নেতারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলো না।
তিনি জাতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে দলগত বিভক্তি ঘুচিয়ে জাতীয় স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেন।
আলোচনা সভা শেষে প্রতিবাদী নৃত্যুনাট্য পরিবেশন করা হয়।

প্রতিবাদী নৃত্যনাট্যের একটি অংশ
পরে শিশু-কিশোররা ’৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে আগ্রাসন চালানোর প্রতিবাদে বেলুচ রেজিমেন্ট সৈন্যবাহিনীর কুশপুত্তলিকায় তীর ধনুক ও লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করেন। একই সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দালালদের কুশপুত্তলিকায় আক্রমণ করেন শিশু-কিশোররা।
এ সময় ক্রস চিহ্ন দিয়ে কুজেন্দ্র লাল, বীর বাহাদুর, দীপংকর তালুকদারের ছবিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইন লেখা কাগজ টাঙিয়ে রাখা হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।