দীঘিনালায় জুয়া, মাদক ও অপসংস্কৃতি রোধকল্পে গণ আালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

0

দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৩ জুলাই ২০২৩

সভায় বক্তব্য রাখছেন ধনপাদাদ মৌজার হেডম্যান যুব লক্ষণ চাকমা। ছবি: প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ‘জুয়া, মাদক ও অপসংস্কৃতি রোধকল্পে সর্বস্তরের জনগণের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার (৩ জুলাই ২০২৩) সকাল ১০টায় ‘সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটি, বাবুছড়া’ এর উদ্যোগে বাবুছড়া এলাকায় এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় রাস্তা মাথা, কিয়াংঘাট, নুয়োবাজার, হেডম্যান পাড়া, জারুলছড়ি, বাগান পাড়া, চিলেন ছড়া, শুকনাছড়ি, লাম্বাছড়া, বড়ইতুলি, তুলি পাড়া, ধনপাদা এলাকা থেকে নানা বয়সী ও শ্রেণী-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

“সৎ চিন্তা করুন, সৎ পথে চলুন” ব্যানার শ্লোগানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাবুছড়া সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অনুরূপা চাকমা ও সঞ্চালনা করেন ‍যুব সমাজের প্রতিনিধি গৌতম চাকমা।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ৪৮ নং ধনপাদা মৌজার হেডম্যান যুব লক্ষন চাকমা, ৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নন্দ প্রিয় চাকমা, ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দীঘিনালা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মিতালি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমা।

সভায় ধনপাদা মৌজার হেডম্যান যুব লক্ষন চাকমা বলেন, এলাকায় ও সমাজে জুয়া ও মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের অপব্যবহার, অনলাইনে গেম, জুয়া খেলা অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ফলে ছাত্র-যুব সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। তাই এ বিষয়ে এলাকার সবাইকে সচেতন হতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় ও মদ-জুয়া রোধকল্পে এলাকার প্রত্যেক গ্রামে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।  

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডও জোরদার হয়েছে। অবাধে বন উজার ও গাছ কেটে পাচার, জুম চাষের উপর নির্ভরশীলতা, পরিবেশ ক্ষতিকারক গাছ লাগানো হচ্ছে। পাহাড়ের বর্তমানে ব্যাপকহারে সেগুন বাগান সৃজন করায় পানির উৎসে প্রভাব পড়েছে। ফলে শীতকালে ছোট ছড়া-ঝিরিতে আর পানি থাকে না। এতে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

তিনি বলেন, বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে জাতিগতভাবে যেমন ক্ষতির শিকার হচ্ছি, তেমনি শিক্ষা, সামাজিকভাবে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, গুণগত মানের শিক্ষার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি জুয়া, মাদক ও অপসংস্কৃতি রোধসহ মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড বিশেষত জুম চাষের নামে অবাধে বনে আগুন দেয়া ও বন উজার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।

সভায় বক্তব্য রাখছেন ইউপিডিএফ সংগঠক মিল্টন চাকমা। ছবি: প্রতিনিধি

ইউপিডিএফ নেতা মিল্টন চাকমা বলেন, সমাজ ও জাতিকে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য ছাত্র-যুবক-নারী সমাজসহ জনগণকে সচেতন হয়ে সঠিক পথে চলতে হবে। পার্টি সকল অপকর্মে বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে সমাজে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। সামাজিক অবক্ষয়, মদ-জুয়া, গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে থাকলে সমাজে নানা অপকর্ম সংঘটিত হবে। শাসকগোষ্ঠি চায় আমাদের ছাত্র-যুব সমাজ এভাবে রসাতলে যাক, আন্দোলন বিমুখ হোক। তাই এসব মাদকাসক্ত, বিপথগামী যুব সমাজকে দিয়ে ঠ্যাঙারে গ্রুপ সৃষ্টি করে আন্দোলনেও বাধা সৃষ্টি করছে শাসকগোষ্ঠি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে বার বার জুয়ারী, মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা সেবনকারী ও মাদকদ্রব্য পাচারের সাথে জড়িতদের সতর্ক করা হয় ও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। তবে এমন অপকর্ম রোধ করার জন্য জনগণের সমর্থন, সহযোগীতা ছাড়া কেবল পার্টির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এ কাজে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সামনে বাবুছড়া ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হচ্ছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের ঘরে ঘরে এলাকার সাধারণ ভোটাররা মদ খেয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এটা সমাজে খারাপ প্রভাব পড়ছে। মনে রাখতে হবে, আমরা এখনো অধিকারহীন, অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছি। তাই মাদকদ্রব্য সেবন, জুয়া-গেম খেলে সময় পার না করে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমাদের যুব সমাজকে মনোযোগী হতে হবে।

সভায় বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ‌‍”মাদক সেবনের পরিণতি ভয়াল অকাল মুত্যু; মদের নেশা আছে যার, ছারখার হয় তার পরিবার; পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে জুয়া খেলে ধনী হয়েছে; মাদক ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির শত্রু; জুয়া খেলে নিজের, পরিবারের ও সমাজের ক্ষতি করবেন না; মাদক দ্রব্য সেবন পরিত্যাগ করুন,সর্বনাশা মাদককে না বলুন; মদখোর ও জুয়াড়িদের চিহ্নিত করুন, জুয়া ও নেশাকে ঘৃণা করুন; মদ-জুয়া ত্যাগ করুন, সুস্থ -সুন্দর পরিবার, সমাজ ও জাতি  গঠন করুন; অলসতা ত্যাগ করুন, বৃথা অন্ন ধ্বংস করবেন না; সমাজ অননুমোদিত বিয়ে প্রতিরোধ করুন; নারীর সম্ভ্রম ও মর্যাদা রক্ষা করুন; অসময়ে অযথা ঘুরাফেরা থেকে বিরত থাকুন; যে নারী সুখের লোভে স্বজাতি ত্যাগ করে সে কেবল দুঃখকেই লাভ করে; মা-বোনেরা, অন্য জাতির পুরুষদের মিথ্যা প্রেম ও বিয়ের প্রলোভনে পড়ে জীবন শেষ করবেন না; প্রেম ও বিয়ের নামে অন্য জাতির পুরুষ কর্তৃক পাহাড়ি নারীদের পতিতালয়ে বিক্রি সম্পর্কে সচেতন হোন; স্বজাতির ছায়া হলো সবচেয়ে সুশীতল, বুদ্ধের এই বাণী মনে রাখুন; নিজ জাতি, সমাজ ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসুন, সম্মান করুন; নিজ নিজ ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করুন, নিজস্ব জাতীয় পোষাক ব্যবহার করুন” ইত্যাদি।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More