দীঘিনালায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন (১৮৬০-১৯৪৭) নিয়ে আলোচনা সভা

0


দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫

‌‌‌‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আগ্রাসন প্রতিরোধের বীরগণ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস’ শ্লোগানে এবং “শাসকচক্রের প্ররোচনায় জাতীয় অস্তিত্ব বিনাশের চক্রান্তে লিপ্ত দালালদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন” এই আহ্বানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন (১৮৬০-১৯৪৭) বিষয়ে দীঘিনালায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ১ আগষ্ট ২০২৫, শুক্রবার, দুপুর ১:৩০ “জাতীয় চেতনা উম্মেষ সংঘ” ব্যানারে দীঘিনালা ইউনিয়নের পুকুর ঘাট এলাকায় এক হল রুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শুরুতে ব্রিটিশ আগ্রাসনে প্রতিরোধের বীরদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতি করেন দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা ও সঞ্চালনা করেন যুব সমাজ প্রতিনিধি চিক্কো চাকমা।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন, বাবুছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুগত চাকমা, বিশিষ্ট সমাজসেবক আনন্দ মোহন চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দীপুলাক্ষ চাকমা, বোয়ালখালী মৌজার হেডম্যান ত্রিদীপ রায় পোমাং, ইউপিডিএফ সংগঠক চন্দন চাকমা প্রমুখ। এছাড়া বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমা, বাঘাইছড়ি মৌজান হেডম্যান সত্যেন্দ্রিয় চাকমা প্রমুখ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

সুগত চাকমা বলেন, ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলনে করেছেন তাদের ইতিহাস পড়ে বর্তমান অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সাহসী হতে প্রেরণা দেয়।

তিনি যারা অতীতের গৌরবগাঁথা বিকৃতি করে ইতিহাস লেখেন তাদের সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের শাসক গোষ্ঠী পাহাড়িদের সঠিক ও বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরে না পাঠ্যবইয়ে। পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠির বীরত্বের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে লেখা দরকার।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আনন্দ মোহন চাকমা বলেন, মুঘলরা তৎকালীন রাজাদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে স্বাধীন রাজ্য কার্পাস মহলে আর আগ্রাসন চালায়নি। পরবর্তীতে পলাশি যুদ্ধের ফলে পুরো ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা খর্ব হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশি শাসকরা তাদের শাসনকার্য শুরু করলে তার বিরুদ্ধেও ভারত উপমহাদেশে বহু বিদ্রাহ হয়। এর পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে যারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা তথা পাহাড়িরা। ব্রিটিশ শাসকদের কর দাবির বিরুদ্ধে রাজা শের দৌলত খাঁ ও তার সেনাপতি রুণু খা দেওয়ান প্রতিরোধ যুদ্ধ সংগঠিত করেন। ব্রিটিশরা পাহাড়িদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। ব্রিটিশ শাসকরা মনে করেছিল, সমতল থেকে লবন, তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে পাহাড়িরা এমনিতে নত হয়ে পড়বে। কিন্তু রুণু খাঁ দেওয়ানরা তার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে লাকড়ি  ও তুলা সরবরাহ বন্ধ করে দেন।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম কখনো বাংলায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

দীপুলাক্ষ বলেন, ইতিহাসের পরিক্রমায় পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ভাগ হয়েছে। পাকিস্তান আমলে পাহাড়িদের স্বার্থ কেড়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ যুগেও পাহাড়িদের ষড়যন্ত্র করে ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতি দিয়ে শাসন করে যাচ্ছে।  

তিনি বলেন, জাতীয় চেতনায় পাহাড়িদের বৃহত্তর ঐক্য হলে সকল ষড়যন্ত্র রোধ করা সম্ভব। তবে নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। ১৮৬০ সালের পূর্বে যে চেতনা ছিলো সে চেতনাকে ধারণ করে বর্তমানেও বীরত্বের সঙ্গে আন্দোলন দরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More