দীঘিনালায় বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে শোভাযাত্রা
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০২৩

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২৮ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার সকাল ১০টায় ‘পরিবেশ দূষণ রোধ কমিটি-দীঘিনালা’ ও ‘প্লাস্টিক পলিথিনের বিরুদ্ধে সচেতন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এতে শিশু-কিশোর ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সহস্রাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন।

‘রাবার, সেগুন, ইউক্লিপটাসসহ বিদেশী প্রজাতির গাছের বিস্তার ঘটিয়ে প্রাকৃতিক বনজঙ্গল বিপন্ন করবেন না, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য করুন” শ্লোগানে আয়োজিত শোভাযাত্রাটি বাবুছড়া নোয়াপাড়া হতে শুরু হয়ে মুড়োপাড়া ঘুরে নোয়াবাজার এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাবুছড়া বাঁশ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী অরুণ বিকাশ চাকমা ও সঞ্চালনা করেন টত্তুমনি চাকমা। এতে বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গগণ বিকাশ চাকমা, প্রতিভা চাকমা ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আনন্দ ময় চাকমা।
সমাবেশে চেয়ারম্যান গগণ বিকাশ চাকমা বলেন, প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করতে হলে নিবিড়ভাবে যে গাছ নিধন চলছে তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। পারিবারিকভাবে অর্থের প্রয়োজন গাছ কাটলেও তার বদলে আমাদেরকে গাছ রোপন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বাজার থেকে বিষ মিশ্রিত শুঁটকি, খাদ্য খাচ্ছি। ফলে মানুষের মধ্যে নানা রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া আমরা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক বর্জ্য যথাযথ স্থানে না ফেলে যত্রতত্র ফেলে দিই। এতে করে দূষণ সৃষ্টি হয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আনন্দ ময় চাকমা বলেন, আগে মিইনী নদীর মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা নেয়া করতাম। কিন্তু এখনে সেই মিইনী নদীতে আর পানি নেই। এ বছর আষাঢ় মাসেও বৃষ্টি হয়নি। শ্রাবণ মাসেও কি পরিমাণ বৃষ্টি হবে তাও বলা যায় না। আমার ৭০ বছরের জীবনে এবারই আষাঢ় মাসে বৃষ্টি না হওয়া দেখলাম। এই যে বৃষ্টি না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বন-জঙ্গল উজাড় করা। এর ফলে এখন ছড়া-ঝিরি শুকিয়ে যাচ্ছে, পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, দেশীয় জাতের ধানের বদলে উন্ন প্রজাতির ধান চাষের প্রচলন হওয়ায় জমিতে ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন মাটির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে, অপরদিকে ব্যাঙসহ উপকারী পোকামাকড় ধ্বংস হচ্ছে। তিনি জৈব প্রক্রিয়ায় উৎপাদনের বিষয়ে বিশ্বের জ্ঞানী-গুণীদের চিন্তা-ভাবনা করা দরকার বলে মনে করেন।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বন ধ্বংস হলে পানি শুকিয়ে যায়। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে মরুভূমি হওয়া থেকে রক্ষার জন্য এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের উপযোগী গাছ-বাঁশ লাগিয়ে বন সৃষ্টি করতে হবে।

প্রতিভা চাকমা বলেন, আগে বনে গেলেই লাকড়ি পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর পাওয়া যায় না। ফলে এখন কারেন্টের চুলা, গ্যাসের চুলা দিয়ে রান্না-বান্না করতে হচ্ছে। তিনি সেগুন গাছ, রাবার গাছ না লাগিয়ে ফলজ গাছ লাগানোর মত দেন।
তিনি ছড়া-ঝিরিতে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ, কাঁকড়া ধরার কথা উল্লেখ করে বলেন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে প্রকৃতির উপর তার প্রভাব পড়ে। তাই এ বিষয়েও আমাদের সচেতন হতে হবে। মাছ, কাঁকড়া ধরার এমন প্রক্রিয়া বাদ দিতে হবে।
এ সময় বন, প্রকৃতি, পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
শোভাযাত্রার আগে বাবুছড়া মূল সড়কে প্লাস্টিক বর্জ্যসহ পরিবেশ ক্ষতিকারক বিভিন্ন আবর্জনা পরিষ্কার করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন