দীঘিনালায় সেনা-সেটলার হামলায় শহীদ ধন রঞ্জন চাকমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, বিক্ষোভ সমাবেশ

0

দাহক্রিয়া সম্পন্ন

 ইউপিডিএফ সংগঠন মিল্টন চাকমার নেতৃত্বে শহীদ ধন রঞ্জন চাকমার মরদেহ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। 


দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর সেনা-সেটলার হামলায় শহীদ ধন রঞ্জন চাকমা’র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ইউপিডএফসহ এলাকার জনগণ।

 আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সকাল ১১টায় উদোল বাগান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউপিডিএফসহ সর্বস্তরের জনতা তার মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মিল্টন চাকমা ও হিজল চাকমা, ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রিটেন চাকমা, সুইটি চাকমা ও গৌতম চাকমা। এরপর সর্বসাধারণ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এলাকার সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন


শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গত ১৯-২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে সেনা ও সেটলার হামলায় নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর সেনা-সেটলার হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ইউপিডিএফর অন্যতম সংগঠক চন্দন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ দীঘিনালা ইউনিটে সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, দীঘিনালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা ও বাবুছড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গগণ বিকাশ চাকমা ও এলাকাবাসী পক্ষ থেকে কৃপা রঞ্জন চাকম।

সমাবেশে বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যন গগণ বিকাশ চাকমা বলেন, মোটর সাইকেল চোর মো. মামুনের গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হচ্ছে তা আমাদের নিয়মিত প্রতিরোধ, প্রতিবাদ গড়ে তোলার সময় উপস্থিত হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতির মধ্যে কোন বিভেদ না করে ঐক্যের  মধ্য দিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরী হয়ে পড়েছে। জাতীয ঐক্য গড়ে তুলে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে।


দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বলেন, ধন রঞ্জন চাকমা বাঙালি সেটলারদের হামলার শিকার হওয়া পাহাড়িদের বাঁচাতে গিয়ে নিজে জাতির জন্য জীবন দিয়ে গেলেন। তিনি আমাদের মাঝে চির দিন অমর হয়ে থাকবেন।

সমাবেশে মিলটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এই যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে এর মূল কারণ হলো সেনাবাহিনীর শাসন। সেনাবাহিনীই মূলত সেটলারদের মানবঢাল হিসেবে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে বার বার এ ধরনের হামলার ঘটনা সংঘটিত করছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করতে পারি তাহলে সেনা-শাসকগোষ্ঠীর কোন ষড়যন্ত্র করতে সফল হবে না। আজকে ছাত্র, যুবক, নারীসহ সর্বস্তরের মানুষ শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, রাস্তায় নামছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নেয়ার দাবি তুলছে, যা আগে তেমন একটা শোনা যায়নি।

তিনি সেনা-সেটলার হামলা-গুলিতে নিহত-আহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করার দাবি জানান।

মিল্টন চাকমা অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত সেনা-সেটলারদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি এবং দীঘিনালা জোন কমাণ্ডার ওমর ফারুককে অপসারণসহ শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশের পর ধন রঞ্জন চাকমাকে নিজ গ্রাম উদোলবাগানের শ্মশানে দাহ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বিকালে সেটলার বাঙালিরা মিছিল বোয়ালখালী এলাকা থেকে মিছিল সহকারে দঘিনালা বাস স্টেশন ও বটতলা লারমা স্কোয়ারে পাহাড়িদের উপর হামলা চালায়। এ হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে সেনা-সেটলারদের হামলায় ধন রঞ্জন চাকমা গুরুতর আহত হয়ে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

উক্ত হামলায় সেটলাররা পাহাড়িদের দোকান ও বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, একটি বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর চালায়। এতে আরো অন্তত ৩ জন পাহাড়ি গুরুতর আহত হন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More