দীঘিনালায় হেডম্যান-কার্বারিদের সাথে ইউপিডিএফ’র মতবিনিময় সভা
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আজ বুধবার (২৫ জানুয়ারি ২০২৩) দুপুর ১:০০টায় এলাকার হেডম্যান-কার্বারিদের সাথে ইউপিডিএফের এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“ভূমি ছাড়া কোন জাতি বাঁচতে পারে না, প্রতি ইঞ্চি জমির জন্য সংগ্রাম করুন, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান” এসব শ্লোগানে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ৩১ নং নুনছড়ি মৌজার হেডম্যান উদয় শংকর চাকমা ও সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ’র দীঘিনালা ইউনিটের সংগঠক দীপন চাকমা।
সভায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, দীঘিনালা উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সুসময় চাকমা, বাবুছড়ার নুনছড়ি গ্রামের কার্বারি সুব্রত চাকমা, বানছড়া (ফ্রেশবাজার) গ্রামের কার্বারি চির জ্যোতি চাকমা, শনখোলা পাড়ার মহিলা কার্বারি যুমনা চাকমা, ৩১ নং বোয়ালখালি মৌজার হেডম্যান ত্রিদীপ পোমাং, ৫১ নং দীঘিনালা মৌজার হেডম্যান প্রান্তর চাকমা প্রমুখ।
ইউপিডিএফ সংগঠক মিল্টন চাকমা বলেন, জাতিকে ধ্বংসের পথ থেকে রক্ষা করতে হেডম্যান ও কার্বারিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ ও জাতির মঙ্গলের জন্য হেডম্যান-কার্বারিদের সঠিকভাবে কাজ করা দররকার। সমাজে নিজ নিজ জাতীয় সংস্কৃতি চর্চা, সামাজিক অবক্ষয় রোধে এগিয়ে আসতে হবে কার্বারি ও হেডম্যানদের। উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে গ্রাম প্রধানদের অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি ভূমি রক্ষায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভূমি হলো একটি জাতির অস্তিত্ব ও প্রাণ। ভূমি ছাড়া কোন জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই ভূমি সমস্যা। এই সমস্যাকে সমাধান না করে সরকার একদিকে দমন-পীড়ন জারি রেখেছে, অন্যদিকে সেনা, সেটলার ও ভূমিদস্যুদের দিয়ে ভূমি বেদখল করে নিচ্ছে। কখনো উন্নয়ন কিংবা পর্যটন স্থাপনের নামে, কখনো ক্যাম্প সম্প্রসারণের নামে ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। সাজেকের মতো জুম্ম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ বাবুছড়া সাধনাটিলা বনবিহারের জায়গা বেদখল করার নানা চক্রান্ত চালানো হচ্ছে। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি রক্ষা করতে হলে হেডম্যান-কার্বারিদের বিশেষত হেডমানদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইউপিডিএফ নেতা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই বলে শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে সাধারণ পাহাড়ি জনগণ। সমাজের এক ধরনের লোক আছে যারা সুবিধাবাদী ও লেজুড়বৃত্তি করে চলেন। তাদের জন্য সমাজ কলুষিত হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলে যোগ দিয়ে নিজ জাতীয়তাবোধ ভুলে অন্য জাতিতে সুবিধা পেতে লেজুড় করেন। সেই সব লোকেরা সমাজে ক্ষতি করে। তারা সমাজ থেকে বিচ্যুত বলেই নিজ জাতীয়তার কথা ভুলে যায়। এদের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হতে হবে।
তিনি বলেন, ইউপিডিএফ নেতৃত্বে সকল শ্রেণী ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা নিশ্চয় লড়াই জোরদার করার মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে পারবো। তাই এর জন্য জেএসএসসহ সকল প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনাকারি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার।
উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সুসময় চাকমা বলেন, পার্টি ও জনগণ ঠিক হলে সব ধরনের কাজ করা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সমাজের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানত দরকার সঠিক নেতৃত্ব। সেই নেতৃত্ব অবশ্যই একটি পার্টি ও সংগঠনকে দিতে হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি বুঝা যায় কোন দল কি করছে। শুধু প্রকাশ করা যায় না। তিনি বলেন, বংশপরম্পরায় সমাজে কার্বারি ও হেডম্যানরা নানা ভূমিকা পালন করে আসছে। কাজেই কার্বারি ও হেডম্যানদের সমাজ অগ্রগতিমূলক কাজ-কর্মে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবেশ ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর বাগান সৃষ্টি না করা, বনজ সম্পদ রক্ষর্থে সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

দীঘিনালায় ইউনিয়নের শনখোলা পাড়ার মহিলা কার্বারি যুমনা চাকমা বলেন, নারী সমাজ হচ্ছে পুরুষ শাসিত সমাজ। বিশেষ করে পাহাড়ি সমাজের গ্রাম আদালতে নারীদের কোন বিচার করতে না দেওয়াটা এর একটা কারণ। লোকজন গ্রামের কার্বারিদের নিকট বিচার পাওয়া জন্য দরখাস্ত দেন কিন্তু বিচারে বিচারক হিসেবে নারীদের রাখা হয় না। তিনি গ্রামে কোন বিচার হলে নারী কার্বারিকে জানানোর আহ্বান করেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা যদি সমাজে বিচার থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন তাহলে সমাজ অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি মনে করেন এবং তিনি নিজেও সমাজের নানা বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে জানান।
হেডম্যান ত্রিদীপ পোমাং বলেন, ডিজিটাল যুগে বেশি পাহাড়িদের ভূমি বেদখল হচ্ছে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আরো কত পাহাড়িদের ভূমি বেদখল হবে তা জানা নেই।
তিনি বলেন, ভূমি সমস্যা নিয়ে বিচারিক কাজে সেটেলারদের সাথে সহজে মামলায় চালানো যায় না। কারণ শাসক দল তাদের সহায়তা করে। যারা পাহাড়ি সমাজে গরীব তাদের পক্ষে মামলা বা বিচারিক কাজ চালানো অনেক কঠিন। তিনি সেটেলারদের নিকট জমি বর্গা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
দীঘিনালা ৫১নং মৌজার হেডম্যান প্রান্তর চাকমা বলেন, কার্বারি ও হেডম্যানদের যতটুকু ক্ষমতা আছে ততটুকু তারা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু অনেক কার্বারি পড়াশোনা তেমন জানা না থাকায় তাদের পক্ষে তো বর্তমান যুগে সমাজে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক কঠিন কাজ। তাই সমাজের অগ্রগতির জন্য কাজ করতে হলে জনগণের জন্য চিন্তা-ভাবনা করার মতো সংগঠন দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বক্তারা আরো বলেন, আঞ্চলিক দলগুলো যদি সঠিকভাবে চিন্তা ভাবনা না করেন তাহলে ভবিষ্যতে জাতি ধ্বংস হতেই বাধ্য। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের কারণে জাতিগতভাবে আমরা অনেক ক্ষতির শিকার হয়েছি। তাই মান অভিমান ভুলে ঐক্য হওয়া দরকার বলে তারা মনে করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন