দীঘিনালায় শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র আত্মবলিদানের ২ যুগপূর্তিতে ছাত্র যুব সমাবেশ

দীঘিনালা : শহীদ ভরদ্বাজ মুনির আত্মবলিদানের ২ যুগপূর্তিতে দীঘিনালায় ছাত্র-যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৬০ জনের সুসজ্জিত একদল শিক্ষার্থী “13 October 1992“ প্রদর্শন করেন।
“ভরদ্বাজ মুনির রক্ত বৃথা যাবে না, শহীদের রক্তবীজ থেকে জন্ম নেবে শত সহস্র বিপ্লবী” এই শ্লোগানে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টায় বানছড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) দীঘিনালা থানা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব সমাবেশে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক জহেল চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি সোনায়ন চাকমা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন, শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সদস্য আনন্দময় চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা ও কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা। সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোমাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশের পূর্বে সকাল সাড়ে ৬টায় শহীদ ভরদ্বাজ মুনির স্মৃতিস্তম্ভে ফুলি দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও শহীদ পরিবারবর্গ।
সমাবেশ শুরুতে শহীদ ভরদ্বাজ মুনিসহ অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সকল শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে আনন্দময় চাকমা বলেন, পিসিপি একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন, সংগঠনের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ খুবই উদ্বেগজনক। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জোর দাবি জানান।
রতন স্মৃতি চাকমা বলেন, ১৯৯২ সালে ছাত্র সমাবেশে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র আত্মবলিদান ও সাহসীকতাকে স্মরণ করে আগামী দিনের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।
বিপুল চাকমা বলেন, ৮০-৯০দশকের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠির অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করার মত উল্লেখ যোগ্য কোনো ছাত্র সংগঠন ছিলো না। ১৯৮৯ সালে পিসিপি আবির্ভাবের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আশার আলো ফিরে পায়। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ছাত্র আন্দোলনের ফলে শাসকগোষ্ঠির টনক নড়ে যায়। ছাত্র সমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠকে রোধ করতে শাসকগোষ্ঠি মরিয়া হয়ে উঠে। শাসকগোষ্ঠি দালাল-সুবিধাবাদী দিয়ে ঠেঙারে বাহিনী, মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে ছাত্রদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে রোধ করতে পিসিপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। ১৯৯২ সালে ১৩ অক্টোবর দীঘিনালায় আহুত ছাত্র ও গণসমাবেশে শাসকগোষ্ঠির লেলিয়ে দেওয়া দুর্বৃত্তরা হামলা করে ৭০বছর বয়স্ক ভরদ্বাজ মুনিকে তারা কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এতকিছুর পরও শাসকগোষ্ঠি পিসিপি’র কণ্ঠ রোধ করতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সরকারের আশ্বাসে নীরব না থেকে নিজস্ব জাতীয় মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র রক্ত বৃথা যেতে পারে না, আমাদেরকে অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে।
সোনায়ন চাকমা বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সরকারের নিপীড়ন আজও ৯২ এর চেয়ে কম নয়। পর্যটনের নামে, সেনা বিজিবি ক্যাম্প সম্প্রসারণের নামে আমাদের জমি বেদখল করে যাচ্ছে। তাই আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার এখনো পর্যন্ত বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদকৃত ২১ পরিবারকে পুনর্বাসন করেনি। তিনি ২১ পরিবারকে দ্রুত পূনর্বাসনের দাবি জানান।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে ভরদ্বাজ মুনিকে উৎসর্গ করে ২৪টি ফানুস উড়ানো হয়।
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।