নাইক্ষ্যংছড়িতে স্কুল স্থাপনের নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা, এলাকাবাসীর মানববন্ধন

0

বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি মৌজায় সীগাল হোটেল নামে একটি বেসরকারি হোটেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক“সীগাল বোর্ডিং স্কুল” স্থাপনের নামে মারমা জনগোষ্ঠির ভোগখলীয় ১৫০ একর ভূমি বেদখল পাঁয়তারার প্রতিবাদে গতকাল (৯ এপ্রিল) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করে। ছবি: সংগৃহিত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সেনাইছড়ি ইউনিয়নের সোনাইছড়ি মৌজায় সীগাল হোটেল নামে একটি বেসরকারি হোটেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক “সীগাল বোর্ডিং স্কুল” স্থাপনের নামে পাহাড়িদের ১৫০ একর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ভূমি বেদখল পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন এবং স্মারকলিপি দিয়েছেন।

গতকাল রবিবার (৯ এপ্রিল ২০২৩) সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বরে ‘সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ভুক্তভোগী জনসাধারণ’ এর ব্যানারে উক্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের লামার পাড়া, কেয়াং পাড়া, চিংথোয়াই পাড়া ও জুমখোলা পাড়াসহ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সুইথোয়াই চিং মারমা, মংকিং চাক, মংচাচিং চাক, মংবাচিং তঞ্চঙ্গ্যা, শিক্ষক মংচিং নাই মারমা প্রমুখ।

সুইথোয়াই চিং মারমা বলেন, কক্সবাজারের বেসরকারি হোটেল সিগাল কর্তৃপক্ষ “সীগাল বোডিং স্কৃল’ স্থাপনের নামে এলাকাবাসীর ভোগদখলীয় ১৫০ একর জায়গা বেদখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ওই জায়গায় ৩৫০ মারমা পরিবার বসবাস করছে। সেখানে হোটেল কর্তৃপক্ষ স্কুল বোর্ডিং স্থাপন করলে সেখান থেকে বসবাসকারীরা উচ্ছেদ হয়ে যাবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ করা না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে চাক সম্প্রদায়ের নেতা মংচিং চাক বলেন, এর আগেও নাইক্ষ্যংছড়িতে বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ভূমি বেদখল করা হয়েছে। যার ফলে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৮টি চাক সম্প্রদায়ের পাড়া ও ৮টি মারমা সম্প্রদায়ের পাড়া উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো এখনও বিভিন্ন জায়গায় উদ্বাস্তু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাই ভুমি বেদখলের বিরুদ্ধে সকল ন্যায্য আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, গত ২ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. অহিদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে জানতে পারি যে আন্তর্জাতিক মানের সিগাল বোর্ডিং স্কুল স্থাপনের নামে সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসা ৩৫০ মারমা পরিবারের ভোগদখলীয় ও বন্দোবস্তকৃত জমি থেকে ১৫০ একর জায়গা বেদখলে পাঁয়তারা করছে। এই অবৈধ বেদখল কোনোমতেই মেনে নেওয়া হবে না ।

মানববন্ধনে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মাও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এলাকার স্থানীয় লোকজনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বাইরের কাউকে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে না। এ সময় তিনি নাইক্ষ্যংছড়িতে দায়িত্ব নিয়ে আসার পর বাইরের কাউকে ভূমি বন্দোবস্ত দেননি বলে জানান এবং স্থানীয় লোকজনকে ভূমি বেদখলের বিষয়ে সচেতন থাকতে বলেন।

ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী উক্ত ভূমি বেদখল প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে হোটেল সিগালকে স্কুল নির্মাণের নামে জায়গা দেওয়া হলে ৩৫০টি মারমা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভূমি থেকে উচ্ছেদ হবে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ জীব বৈচিত্র ধ্বংস হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. অহিদ উল্লাহর মাসুম ইকবালের বরাবরে প্রেরিত নোটিশ।

স্মারকলিপিতে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য ঞো থোয়াই প্রু মারমা মিলন, ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মংয়ে মারমা, ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মংচথোয়াই মারমা, উক্যহ্লা মারমা, সুই থোয়াই চিং মারমাসহ বিভিন্ন গ্রামের ৩ শতাধিক মারমা গ্রামবাসী স্বাক্ষর করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট ২০২২ এর পত্রের সূত্র উল্লেখ করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. অহিদ উল্লাহ গত ২ এপ্রিল ২০২৩ কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনের সীগাল ব্রাঞ্চের সীগাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান মাসুম ইকবাল এর বরাবরে “আন্তর্জাতিক মানের সীগাল বোর্ডিং স্কুলের নামে ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) একর খাস ভূমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত” বিষয়ক একটি নোটিশ পাঠান। নোটিশে আগামী ১১ এপ্রিল ২০২৩ সকাল ১০টায় উক্ত বিষয়ে সরেজমিন তদন্তের কথা জানিয়ে মাসুম ইকবালকে মনোনীত সার্ভেয়ার বা প্রতিনিধিকে নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

উক্ত নোটিশটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), নাইক্ষ্যংছড়ি, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নাইক্ষ্যংছড়ি থানা, চেয়ারম্যান ৫ নং সোনাইড়ি ইউপি, হেডম্যান, ২৬৯ নং সোনাইছড়ি মৌজা ও মেম্বার ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড, সোনাইছড়ি ইউপি বরাবরেও অনুলিপি হিসেবে প্রেরণ করা হয়। উক্ত নোটিশের প্রেক্ষিতেই সীগাল হোটেল কর্তৃপক্ষের পাহাড়িদের ভোগদখলীয় ১৫০ একর ভূমি বেদখল পাঁয়তারার তথ্য জানাজানি হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More