নান্যাচরের ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দিনভর সেনা অভিযানে তল্লাশি, হয়রানিসহ যা যা ঘটেছে

নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের কেরেটছড়ি, দীগলছড়ি, দাজ্জ্যাছড়ি, পুনর্বাসন, গড়াহাবা, হাতিমারা, মাইচছড়ি, নুওআদামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রায় দিনভর সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় সেনা সদস্যরা ঘরবাড়িতে তল্লাশি, গ্রামবাসীদের আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করে। এছাড়া একজনকে রাঙামাটি সেনা ব্রিগেডে নিয়ে গিয়ে হয়রানি শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ভোররাত ৪টা সময় নান্যাচর জোনের আওতাধীন বুড়িঘাট, কুদুকছড়ি ক্যাম্পসহ কয়েকটি সেনাক্যাম্প থেকে ১০০-১৫০ জন সেনা সদস্য কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ইঞ্জিন চালিত বোট ও স্পীড বোট যোগে উক্ত গ্রামসমূহে হানা দেয়। সেনারা অন্তত ১১ গ্রামবাসীর বাড়িতে হয়রানিমূলক তল্লাশি চালায়।
তল্লাশির শিকার গ্রামবাসীরা হলেন ৯নং ওয়ার্ডের দাজ্জ্যাছড়ি গ্রামের ১. মানিক্য দেবী চাকমা (৫০), স্বামী মুন্যা চাকমা, ২. বাদি মিলা চাকমা(৪০), স্বামী কিনাধন চাকমা, ৩. শিমুল চাকমা(৩২), পিতা-সাধনা চাকমা, ৪. সুইটি চাকমা(২৭), স্বামী-অমর বিজয় চাকমা, ৫. হুমায়ন চাকমা(২৪), পিতা-নাক্কোচান চাকমা, ৬.নাক্কোচান চাকমা, পিতা মৃত রবাক্কে চাকমা, ৭.স্নেহ কুমার চাকমা (৪৫), পিতা-ধনসুখ চাকমা, ৮.দিপু চাকমা(২৯), পিতা- গোলকচন্দ্র চাকমা; গড়াহাবা গ্রামের ৯. প্রতিময় চাকমা (৯নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার), সেনারা বাড়ি তল্লাশির সময় তাকে হেনস্তা করে বলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে; ১০. টুক্কুচান চাকমা (৪৫) পিতা- চন্দ্রকান্ত চাকমা, গ্রাম- নুওআদাম, ৫নং ওয়ার্ড, ঘিলাছড়ি ইউপি। এছাড়া সেনারা চন্দন চাকমা (৫৫), পিতা-মৃত বাঙ্গাল্যা কার্বারি নামে এক সাাবেক মেম্বারের বাড়িও তল্লাশি চালায়। তার বাড়ি রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চেগেয়াছড়ি গ্রামে।
অভিযানের সময় সেনারা দৈনন্দিন কাজে যাওয়ার পথে বিভিন্ন গ্রামের ২০-২২ জনকে কয়েক ঘন্টা ধরে দাজ্জ্যাছড়ি দোকানে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করে।
হয়রানির শিকার গ্রামবাসীদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- দাজ্জ্যাছড়ি গ্রামের হুমায়ন চাকমা (২৪), পিতা নাক্কোচান চাকমা, নাক্কোচান চাকমা(৪৫), পিতা মৃত-বরাক্কে চাকমা, স্নেহ কুমার চাকমা(৪৫), পিতা ধনসুখ চাকমা, দিপু চাকমা (২৯), পিতা-গোলকচন্দ্র চাকমা, একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নুওআদামের উজ্জল চাকমা(৩৩), পিতা শান্তি কুমার চাকমা। বাকীদের নাম জানা যায়নি।
এছাড়া সেনারা দোকান থেকে গ্রাম্য কবিরাজ রীতিময় চাকমা (৪২), পিতা-মৃত অরবিন্দু চাকমা, গ্রাম- দাজ্জ্যাছড়ি নামে একজনকে রাঙামাটি সেনা ব্রিগেডে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর তাকে নানা জিজ্ঞাসাদের নামে হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন শেষে বিকাল ৪টায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
বাড়ি বাড়ি তল্লাশি-হয়রানি ছাড়াও সেনা সদস্যরা চেঙ্গী নদীর মাঝপথে কয়েকটি বোট যোগে টহল দেয় এবং ঘিলাছড়ি-কুদুকছড়ি সড়কে চলাচলকারী যানবাহনে তল্লাশি চালায় বলেও ভুক্তভোগী গাড়ি চালক ও যাত্রীরা অভিযোগ করেন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দিনভর বিভিন্ন গ্রামে তল্লাশি অভিযানের পর ২০-২২ জনের একদল সেনা সদস্য রাতে দাজ্জ্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছে। বাকি সেনা সদস্যরা কুদুকছড়ি সেনাক্যাম্পে ফিরে গেছে বলে জানা গেছে।
দিনব্যাপী সেনাবাহিনীর এমন হয়রানিমূলক ও ভীতিজনক অভিযানের ফলে এলাকার জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। লোকজনের স্বাভাবিক চলাফেরা ও দৈনন্দিন কাাজে ব্যাঘাত ঘটে।
এলাকাবাসী অবিলম্বে তল্লাশির নামে সাধারণ গ্রামবাসীদের হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।