নান্যাচরে গ্রামে গ্রামে সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের চাঁদা দাবি-হুমকি, জনমনে আতঙ্ক

0

নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের জনগণকে হুমকি দিয়ে জেএসএস (সংস্কারবাদী) সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কার্বারী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখ সংগ্রাম নামে এক ব্যক্তি মোবাইলে (মোবাইল নাম্বার ০১৬০৮৮০৪২০১) গ্রামের কার্বারীদের ফোন করে হুমকি দিয়ে প্রতিটি গ্রাম থেকে ৪/৫ জন লোক নিয়ে মহালছড়ি উপজেলার সিঙ্গিনালায় যেতে বলে।

তার কথামত গ্রামের মুরুব্বীরা সেখানে গেলে তাদেরকে সিঙ্গিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি দ্বিতল ভবনে নেওয়া হয়। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষায় অবস্থায় ছিলেন জেএসএস সংস্কারবাদীদের স্বঘোষিত সশস্ত্র কমান্ডার চয়ন, পাভেল (গ্রাম সাপমারা, নান্যাচর) ও শুক্র কুমার চাকমা প্রকাশ ভুলো/পাভেল্যা বাব (নান্যাচর উপজেলা সদরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত)।

এ সময় সংস্কারবাদীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে উপস্থিত হওয়া গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে ‘বিশেষ চাঁদা’ বলে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। তাদের এমন চাঁদা দাবি বিষয়ে গ্রামের মুরুব্বীরা আপত্তি জানিয়ে ‘এত টাকা চাঁদা দিতে হলে আমাদের মরণ ছাড়া উপায় নেই’ বলে আক্ষেপ করলে সেখানে থাকা সশস্ত্র কমাণ্ডার চয়ন ‘এ নিয়ে আর কোন কথা হবে না’ বলে সাফ জানিয়ে দেন।

তারা (সংস্কারবাদী) যেসব গ্রাম থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি গ্রাম হলো- নান্যাচর সদর ইউনিয়নের সাপমারা, খুল্যাং পাড়া, নোয়াআদাম, পাতাছড়ি, বড়পুল পাড়া, ফিরিঙ্গি পাড়া; সাবেক্ষং ইউনিয়নের মরাচেঙ্গী, শংখোলা পাড়া ও বেতছড়ি মুখ পাড়া এবং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের কেরেটছড়ি।

এসব প্রত্যেক গ্রাম থেকে সন্ত্রাসীরা ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে।

এছাড়া বুড়িঘাট ইউনিয়নের নানাক্রুম গ্রাম থেকে ১ লক্ষ টাকা, আমতুলি গ্রাম থেকে ৭০ হাজার টাকা, উত্তর মংখোলা গ্রাম থেকে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেছে।

সন্ত্রাসীরা অন্তত ৩০টি গ্রামে এভাবে মোটা অংকের চাঁদা ধার্য্য করে দিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পাওয়া গেছে।

উক্ত দাবিকৃত চাঁদা আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছ সন্ত্রাসীরা। অন্যথায় জানমালের ক্ষতি করা হবে বলে তারা হুমকি দেয়। ফলে এত টাকা কীভাবে দেবে এ নিয়ে গ্রামবাসীরা দিশাহীন হয়ে পড়েছেন।  

এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে (নিরাপত্তাহীনতার কারণে) সাবেক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, এমনি এই সময়ে পাহাড়ের জনগণের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এমতাবস্থায় জনগণ কীভাবে মোটা অংকের চাঁদা দেবে?

কিছুদিন আগেও নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ যেন জনগণের জন্য ‌‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, নান্যাচর সদরের সাপ্তাহিক বাজারে (বুধবার) বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিজেদের উৎপাদিত কাচাঁমাল-সবজি, গরু-ছাগল, শুকর বিক্রি করতে গেলেও আগে তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন যেন এসব দেখে না!

তিনি তাঁর গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ ভয়ে দিন কাটাচ্ছে বলে জানান।

এ বিষয়ে নান্যাচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজম-এর থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‌‘এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগী কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More