নান্যাচরে প্রয়াত রিপন আলো চাকমা’র স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

0


নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

সদ্য প্রয়াত পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য রিপন আলো চাকমা’র স্মরণে নান্যাচরে স্মরণসভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাঙামাটি জেলা শাখা।

শুক্রবার (৭ মার্চ ২০২৫) বেলা ১:৩০টায় “বশ্যতা স্বীকার না করে স্বার্থবাদীতার উর্ধ্বে উঠে যিনি আজীবন লড়াই সংগ্রামে অবিচল থেকেছেন, তার স্মৃতি অম্লান” এই ব্যানার স্লোগানে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বারিঝে চাকমা সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক দিপায়ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফের নান্যাচর ইউনিটের সমন্বয়ক সুকীর্তি চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা। এছাড়া এতে উপস্থিত থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীবৃন্দও স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন।

স্মরণসভা শুরুতে প্রয়াত রিপন আলো চাকমা’র স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা এবং প্রয়াতের পরিবারবর্গসহ বিভিন্ন এলাকার ছাত্র-যুবকরা পুষ্পস্তপক অর্পণ করেন। এরপর দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।  

স্মরণসভার প্রথমে সঞ্চালকের মাধ্যমে প্রয়াত রিপন আলো চাকমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পাঠ করা হয়।

স্মরণসভায় ইউপিডিএফ সংগঠক সুকীর্তি চাকমা বলেন, রিপন আলো চাকমা দীর্ঘ ১৪ বছর সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে বশ্যতা স্বীকার না করে, নিজের ব্যক্তিস্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করে গেছেন। এখানেই তার স্বার্থকতা। তিনি তার জীবদ্দশায় সাধ্য অনুযায়ী নিজ দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছেন। তারও স্বপ্ন ছিল অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের মুক্তি। রিপন আলো চাকমার এই আত্মত্যাগ জনগণ ও সংগঠন মনে রাখবে।

পিসিপি নেতা নিকন চাকমা বলেন, সহযোদ্ধা রিপন আলো চাকমা ২০১১ সালে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন। আজীমপুরে প্রথম দেখা হয়, তখন পিসিপি’র নান্যাচর কলেজ শাখার প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে পিসিপি রাঙামাটি জেলা কমিটিতে এসে দীর্ঘসময় সাংগঠনিক কার্যক্রম করেন। পরে ৯ম জেলা কমিটি মাধ্যমে সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়ে দু’বার কারাবরণ করেন।

তিনি আরো বলেন, সহযোদ্ধা রিপন আলোর সাথে আমি দীর্ঘসময় একসাথে কাজ করেছি। তিনি পাহাড়ে নিপীড়িত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে রাজপথে অবিচল ছিলেন বলে তাকে গ্রেফতারের শিকার হতে হয়েছে। তিনি ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করতে সর্বদা চেষ্টা করে গেছেন। শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত ও ভূমি বেদখল বিরুদ্ধে তিনি রাজপথে কথা বলেছেন। কখনও বশ্যতা স্বীকার করেননি, ব্যক্তিস্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে তিনি সামগ্রিক স্বার্থকে মাথার উপর স্থান দিয়েছেন।

প্রিয়তন চাকমা বলেন, রিপন আলো চাকমার বর্তমান কমিটি থেকে বিদায় নিয়ে পার্টিতে যুক্ত হয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার মনোবল ছিল। তার নীতি-শৃঙ্খলা, আদর্শ আমাদের সাহস জোগাবে, আন্দোলন সংগ্রামে সামিল হওয়ার পথ দেখাবে।

জনপ্রতিনিধি’রা স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে বলেন, প্রয়াত রিপন আলো ব্যক্তি হিসেবে অনেক শান্ত, অমায়িক ভদ্র ছিলেন। তার এই অকাল মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা শোকাহত ও মর্মাহত হয়েছি। পিসিপি’র নেতা রিপনকে হারিয়েছি মানে জাতির একজন ভবিষ্যত নেতৃত্বকে হারিয়েছি। নেতৃত্বদানের গুণাবলী তার মধ্যেই আমরা দেখতে পেয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার প্রতিভা বিকশিত হওয়ার মধ্যেই তার অকাল মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য ছিল না। তার মতো নিঃস্বার্থবাদী হয়ে নিজেকে আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ  হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তারা।

বারিঝে চাকমা বলেন, সকল কিছুর উর্ধ্বে রাজনৈতিক অধিকার। সহযোদ্ধা রিপন আলো চাকমা আত্মত্যাগ, নীতি-আদর্শ, শৃঙ্খলা আমাদের পুর্ণস্বায়ত্তশাসন অধিকার আদায়ে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More