নান্যাচর গণহত্যার ২১তম বার্ষিকীতে শোক র্যালি ও সমাবেশ
সিএইচটিনিউজ.কম
নান্যাচর(রাঙামাটি): “নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আমাদেরকে দমিয়ে রাখা যাবে না” এই শ্লোগানে ১৯৯৩ সালে সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত নান্যাচর গণহত্যার ২১তম বার্ষিকীতে শহীদের স্মরণে আজ ১৭ নভেম্বর ২০১৪, সোমবার নান্যাচর উপজেলা সদরে শোক র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নান্যাচর উপজেলা সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটি এই র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করে।
সোমবার সকাল ১১টায় নান্যাচর উপজেলা সদরের রেস্ট হাউজ মাঠ থেকে এক শোক র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও নান্যাচর বাজার প্রদক্ষিণ করে শ্মশানে গিয়ে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটি, শহীদ পরিবার, ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর র্যালিটি আবারো রেস্টহাউজ মাঠে ফিরে আসে। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান সুপন চাকমার সভাপতিত্বে এবং নান্যাচর সদর ইউপি মেম্বার ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সেন্টু চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নান্যাচর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ খীসা, ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অমর জীবন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের প্রতিনিধি কাজলী ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সেদিন (১৭ নভেম্বর ’৯৩) অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সেনা-সেটলাররা মিলিতভাবে বাজারে সওদা করতে আসা নিরীহ পাহাড়িদের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আজ ২১ বছর অতিক্রান্ত হলেও এ হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নান্যাচর গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত ডজনের অধিক গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ার কারণে এখনো বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার একদিকে সেনা আবাসন তৈরি ও ক্যাম্প সম্প্রসারণ, বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার একর জমি বেদখল করে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে; অপরদিকে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ, মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নামে তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সরকারের এই বৈষম্য নীতির কারণে পাহাড়িদের অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির সম্মুখীন।
বক্তারা মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থাপিত কলেজ ও স্কুলগুলো আধুনিকায়নে মনোযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র ভূমি বেদখল ও ভূমি থেকে উচ্ছেদের ঘটনা নয়, এখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ি নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনাও থেমে নেই। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও এ ধরনের বর্বর ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের তরফ থেকে নারী ধর্ষণ ঘটনার মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট প্রদানে গোপন নিষেধাজ্ঞা থাকায় এসব ঘটনারও কোন সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না।
বক্তারা সকল অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা নান্যাচর গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও এসব হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।