পঞ্চদশ সংশোধনী ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গ

0

[গতকাল ৩০ জুন ২০১৬ চট্টগ্রাম থিয়েটার ইন্সটিটিউট হলে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় এই প্রবন্ধটি পাঠ করা হয়। প্রবন্ধটির প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে এখানে হুবহু প্রকাশ করা হলো- সম্পাদকমণ্ডলী ]

১। ভূমিকা:
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নতুন সংবিধান গৃহীত এবং একই সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ১৬ বার সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চদশ সংশোধনী হলো দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে তাদের স্বতন্ত্র জাতীয়তার স্বীকৃতির পরিবর্তে তাদের উপর সংখ্যাগুরু জাতির বাঙালি পরিচয় আরোপ করা হয়।

সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি। অপরদিকে এই সংবিধানেই রাষ্ট্রের চরিত্রের এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়। তাছাড়া একটি রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমার মধ্যে বসবাসরত জাতিগুলোর পারস্পরিক অবস্থান, সম্পর্ক ও অধিকারের বিষয়ও সংবিধানে লিখিত থাকে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানে দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের অবস্থান অর্থাৎ রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক নির্ণয়ই হলো এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য।

২। সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের অবস্থান:
বাংলাদেশ সংবিধানের প্রস্তাবনার শুরুতে বলা হয়েছে, ‘আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।’ এই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জনগণের পাশাপাশি জুম্মজাতিসহ দেশের অপরাপর সংখ্যালঘু জাতিগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন দল, সংগঠন ও ব্যক্তি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।Bangladesh constitution

কিন্তু স্বাধীনতার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ এককভাবে সংগ্রামে নেতৃত্বদানের কৃতিত্ব দাবি করে বাংলাদেশকে একটি এক-জাতি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার আগে ও পরে তাদের স্বতন্ত্র জাতীয় অস্তিত্বের স্বীকৃতি ও ঐ অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা লাভের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তাদের সে প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। তাদের দাবি উপেক্ষা করে ১৯৭২ সালে গৃহীত সংবিধানে বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে বলবৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ ‘বহির্ভূত এলাকা’র মর্যাদা বাদ দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, সংবিধানে সকল নাগরিকের জাতীয় পরিচয় বাঙালি উল্লেখ করে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের স্বতন্ত্র পরিচয় মুছে ফেলা হয়, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দুই দশকের অধিক সময় ব্যাপী সশস্ত্র সংগ্রমের ভিত্তি তৈরি করে। ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত দীর্ঘ দেড় দশকেরও অধিক সময় সামরিক সরকার বাংলাদেশ শাসন করে। এ সময় সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় এবং রাষ্ট্র ধর্মের বিধান সংযোজনসহ সংবিধানকে ইসলামীকরণ করে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের অবস্থানকে আরো বেশী প্রান্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। এই সংশোধনী প্রণয়নের জন্য তৎকালীন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সংশোধনীর জন্য মতামত আহ্বান করলে ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষে একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা, সংবিধানে জাতীয় পরিচিতির স্বীকৃতি ও ভূমি অধিকারের দাবি জানানো হয়। কিন্তু সংশোধনী প্রণয়ন কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের এসব ন্যায্য দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে।

পঞ্চদশ সংশোধনীর দু’টি অনুচ্ছেদ সংখ্যালঘু জাতিসমূহের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং তা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে তাদের অবস্থানকে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরে। জাতীয়তা ও নাগরিকত সম্পর্কে ৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:

‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’

এরপর নতুন ২৩ক অনুচ্ছেদ সংযোজন করে এতে বলা হয়:

‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

উক্ত দু’টি অনুচ্ছেদ একত্রে পাঠ করলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। এক. বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রীয় সীমানায় বসবাসরত জনগণের জাতীয় পরিচয় হলো ‘বাঙালি’। এছাড়া অন্য কোন জাতিত্বের স্বীকৃতি নেই। দুই. এক কলমের খোঁচায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, গারো, মুনিপুরী ইত্যাদি সংখ্যালঘু জাতিগুলোর স্বতন্ত্র জাতীয় পরিচয় মুছে দিয়ে তাদের উপর কৃত্রিমভাবে বাঙালি জাতীয়তার পরিচয় আরোপ করা হয়েছে। তিন. চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি সংখ্যালঘু জাতিগুলো হলো ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’, নৃগোষ্ঠী’ ও ‘সম্প্রদায়’; তবে জাতি হিসেবে তারা ‘বাঙালি’। চার. এই দুই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতির জনগণকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে তাদের প্রান্তিকতা ও অধঃস্থনতার সম্পর্ক ফুটে উঠেছে।03-

একজন নারী বা পুরুষ তার নাম, বিশ্বাস, ধর্ম ও নাগরিকত্ব পরিবর্তন করতে পারে। এমনকি উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে সে তার চেহারা এবং লিঙ্গও পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু তার জাতীয় পরিচয় পরিবর্তন করতে পারে না। কারণ একজন মানুষের জাতীয়তা জন্মের দ্বারা নির্ধারিত হয়, আইন বা সংবিধান দ্বারা নয়। সে কারণে একজন চাকমাকে (বা অন্য কোন সংখ্যালঘু জাতির লোক) কোন দিন কাউকে বাঙালি বলতে শোনা যায়নি। অনুরূপভাবে কোন একজন বাঙালিকে কেউ চাকমা বলেনি। একজন বাঙালি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঙালি থাকে। একজন চাকমা বা মারমাও তাই। অথচ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের এই স্বাভাবিক ও জন্মগত জাতীয় পরিচয়কে মুছে ফেলে দিয়ে অন্য একটি ভিন্ন জাতীয় পরিচয় তাদের উপর আরোপ করা হয়েছে।

৩। কিছু মৌলিক প্রশ্ন: জাতি, উপজাতি, নৃগোষ্ঠী
বাংলাদেশ সংবিধান পাঠ করলে যে কারোর মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশে কেবল একটি মাত্র জাতি রয়েছে: বাঙালি জাতি। দেশের সরকারী নেতৃবৃন্দের বক্তব্যেও এই সুরই ধ্বনিত হয়। বিগত সংসদের উপনেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের পর বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ বাঙালিদের দেশ। বাঙালি ছাড়া অন্য কেউ এখানে থাকতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই আদর্শের পরিপন্থী অন্য কোন আদর্শ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ [নিউ এজ, ৫ এপ্রিল ২০১২] এর পরদিন অন্য এক আলোচনায় বাংলাদেশ তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জমির বলেন, তিনি বাংলাদেশে বসবাসরত জনগণকে বাঙালি বলতে পছন্দ করেন। [নিউ এজ, ৬ এপ্রিল ২০১২]

বাস্তবিক পঞ্চদশ সংশোধনী ও আওয়ামী লীগসহ সরকারী মহলের দৃষ্টিভঙ্গি নতুন করে জাতি, জাতিত্ব, উপজাতি, নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশ কি এক-জাতি রাষ্ট্র? এখানে কি কেবল একটি মাত্র জাতি বাস করে, যেমনটা সাজেদা চৌধুরী মনে করেন? দুই, জাতির সংজ্ঞা কী? তিন, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংজ্ঞাই বা কী? চার, কোন বিবেচনায় বা মানদ-ে কোন জনগোষ্ঠীকে জাতি বলা যায়? পাঁচ, রাষ্ট্র কি স্বেচ্ছাচারভাবে কোন একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয় পরিচয় নির্দিষ্ট করে দিতে পারে? ছয়, কোন একটি জনগোষ্ঠী কী জাতি, নাকি উপজাতি, নাকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তা ঠিক করে দেয়ার অধিকার কি অন্য একটি জনগোষ্ঠীর আছে?

যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, জনসংখ্যার বিচারে কেবল বাঙালিরাই জাতি এবং চাকমা বা মারমারা উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তাহলেও কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, একজন চাকমা (মারমা বা অন্য কোন সংখ্যালঘু জাতি) একই সাথে কীভাবে উপজাতি ও জাতি হতে পারে? কারণ ২৩ক অনুচ্ছেদ মতে সে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী। কিন্তু ৬(২) অনুচ্ছেদ বলে যে, ‘জাতি হিসাবে’ তার পরিচয় ‘বাঙালী’। সংখ্যালঘু জাতিসমূহের জাতীয় পরিচয় নির্ধারণে পঞ্চদশ সংশোধনীর এই স্ববিরোধীতা যে শাসকগোষ্ঠীর উগ্র জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত তাতে কোন সন্দেহ নেই।

৪। জাতিসমূহের সমানাধিকার নাকি বৃহ জাতির বিশেষাধিকার?
বর্তমান সংবিধানে স্বীকার করা হোক বা না হোক, বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক দেশ। বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতি ছাড়াও চাকমা, মারমাসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি এ দেশে বসবাস করে আসছে। তবে ঐতিহাসিক, ভৌগলিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে এই জাতিগুলোর বিকাশ অসম। অর্থাৎ জাতি হিসেবে তারা বিকাশের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। এ দেশে জাতি হিসেবে সবচেয়ে অগ্রসর হলো বাঙালি। তাদের নেতৃত্বেই এ দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রসরতার জোরে কি একটি রাষ্ট্রে কোন একটি নির্দিষ্ট জাতি অন্যান্য জাতিগুলোকে বাদ দিয়ে বিশেষ অধিকার (special privilege) ভোগ করতে পারে? একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অনগ্রসর জাতিগুলোর বিকাশের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা — যেভাবে একজন মালি তার বাগানের সব ফুল গাছের পরিচর্যা করে থাকেন। অথচ আমরা দেখি, বাংলাদেশ সংবিধানে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি, বরং একটি নির্দিষ্ট জাতির জন্য বিশেষাধিকার রাখা হয়েছে।

৫। সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসমুহের স্বীকৃতি না থাকার অর্থ কী?
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং নাগরিকদের অধিকারের সীমা নির্দিষ্ট থাকে। এ জন্য সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের স্বীকৃতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন জাতি বা জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করার অর্থই হলো তার অধিকারকে অস্বীকার করা ও তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা। আপনার কারো কাছে দেনা আছে — এই সত্য যদি আপনি স্বীকার করেন, তাহলে তার অর্থ হলো আপনি ঐ ব্যক্তির ন্যায্য পাওনা স্বীকার করলেন এবং এরপর আপনি তাকে তার ঐ পাওনা মিটিয়ে দিতে আইনত বাধ্য থাকবেন। অপরদিকে সত্যকে অস্বীকার করা হলে সত্যকে চাপা দেয়ার প্রয়োজন হয়, সত্য ধারণকারীকে suppress করার প্রয়োজন হয়। তাই বলা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের অস্তিত্ব স্বীকার না করার সাথে তাদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের সম্পর্ক রয়েছে। মূল কথা হলো, সরকার দেশের সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখার জন্য তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে কোন কোন মহলের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা প্রয়োজন। “আদিবাসী” শব্দটি একটি মানবাধিকার সংক্রান্ত ধারণা। চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের মতে, ‘Indigenous’ is a human rights construct. [Constitutional reform and adivasis, ২০ জুলাই ২০১১ New Age 8th Anniversary Special, July 20, 2011] দ্বিতীয়ত, ‘আদিবাসীর’ কোন সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। আদিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্রেও এর কোন সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করা হয়নি। তবে আদিবাসী বলতে সাধারণভাবে সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে বোঝায়। ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র জাতি’, ‘নৃগোষ্ঠী’, ‘জনজাতি’, ‘পাহাড়ি জাতি’, ‘সংখ্যালঘু জাতি’ যে নামেই তারা নিজেদের পরিচয় দিতে পছন্দ করুক বা যে নামেই তাদেরকে অভিহিত করা হোক, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে তাদেরকে আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। সে কারণে আদিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্রে যেসব অধিকার বর্ণিত আছে, সে অধিকার পাবার জন্য কোন জনগোষ্ঠীর নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিলে মানবাধিকার বিষয়ক শব্দের চাইতে রাজনৈতিক শব্দ অন্তর্ভুক্ত করাই সঙ্গত, যুক্তিযুক্ত ও শ্রেয়।

৬। সমাধান কোন পথে?
বাংলাদেশ এক-জাতি রাষ্ট্র নয়, বহুজাতিক রাষ্ট্র। একাডেমিক লেভেলে ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহলে এই সত্য স্বীকার করা হয়। সরকারের উচিত এই সত্যকে মেনে নিয়ে সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে স্বীকৃতি দেয়া। একমাত্র এভাবেই সংবিধানে জাতীয়তা ও সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ে স্ববিরোধীতাকে দূর করা সম্ভব হতে পারে এবং দেশে বসবাসরত সকল জাতির মধ্যে সম মর্যাদা ও সম অধিকারের ভিত্তিতে প্রকৃত ঐক্য ও সংহতি গড়ে উঠতে পারে। বিশ্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে বলতে হয়: ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের রাজার রাজত্বে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?’ [সমাপ্ত]

(পঞ্চদশ সংশোধনী ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গ শীর্ষক আলোচনা সভা, থিয়েটার ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম, ৩০ জুন ২০১৬।)
—————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More