পানছড়িতে জাতিসত্তার স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে আলোচনা সভা

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০২৪
“ব্রিটিশদের রুখে দিয়েছে রুণু খা’রা, ৪৭-এ পাকিস্তান মেনে নেয়নি স্নেহবাবুরা, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটাতে লড়েছি আমরাও” শ্লোগানে ‘সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে এক আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ছিল- ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধের বীর রুণু খাঁ’র স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্যালুট প্রদান, আগ্রাসনকারী-রক্ত পিপাসু হাসিনা ও তার দালালদের কুশপুত্তলিকায় শিশু-কিশোরদের আক্রমণ।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি আগ্রাসনের’ ৭৭ বছর উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট ২০-২৪) সকাল সাড়ে ১০টায় ‘আত্মশক্তি জাগরণ ফোরাম’ এর ব্যানারে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের ২০ আগস্ট পাকিস্তান সরকার বেলুচ রেজিমেন্ট পাঠিয়ে রাঙামাটি থেকে ভারতের পতাকা ও বান্দরবান থেকে বার্মার পতাকা নামিয়ে আগ্রাসন চালিয়েছিল।
আলোচনা সভাসহ উক্ত কর্মসূচিতে পানছড়ি বিভিন্ন এলাকা ও স্কুল-কলেজ থেকে ছয় শতাধিক যুবক-যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।

প্রথমে সকালে ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধের বীর রুণু খা’র অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভা শুরুতে জাতীয় বীরদের স্মরণসহ পাহাড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ যাবত শহীদ ও জুলাই-আগস্টে দেশে ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপির পানছড়ি উপজেলা সভাপতি সুনীল ময় চাকমা ও সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ সদস্য সুরমঙ্গল চাকমা।
সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন পিসিপির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইউপিডিএফ সংগঠক সুমেন চাকমা। এ সময় মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফের পানছড়ি ইউনিট সমন্বয়ক আইচুক ত্রিপুরা, ইউপিডিএফ সংগঠক বকুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা ও অর্থ সম্পাদক মানিকপুদি চাকমা এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পানছড়ি সভাপতি রিপন ত্রিপুরা।
সুমেন চাকমা তার আলোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানের আগ্রাসন ও তার পূর্বে পার্বত্য সংঘটিত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের উপর বিশদ আলোচনা করেন এবং এর থেকে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে আগামী দিনের লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে ছাত্র-যুব-নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করেন আইচুক ত্রিপুরা, বরুণ চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা মিটন চাকমা ও মানিকপুদি চাকমা।
আলোচনা সভা স্থলে ‘নব্যপাক হানাদার ফ্যাসিস্ট চক্র ধ্বংস হোক নিপাত যাক; গ্রাফিতি অংকনে বাধা রুখে দাঁড়াও ছাত্র-জনতা; সিরিল র্যাডক্লিপ এর মরনোত্তর ফাঁসি চাই; নব্য বেলুচ রেজিমেন্ট ভুমিদস্যু আওয়ামী গণবিরোধী চক্র ধ্বংস হোক নিপাত যাক; ব্রিটিশ রাজ্যের বেঈমানি থেকে শিক্ষা নাও সতর্ক হও; রক্ত পিপাসু হাসিনাকে হটিয়েছি দালাল বেঈমানদের দৌরাত্ম বরদাস্ত করবো না; হাসিনার সংবিধান লাঠি মার, জনগণের সংবিধান রচনা কর”… ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন টাঙানো ছিল।
সভার সভাপতি সুনীল ময় চাকমার বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচির প্রথম প্রর্ব শেষ হয়।
এরপর দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে বিদর্শন চাকমার নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম জাতীয় বীর রুণু খাঁ’র স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মতিস্তম্ভে স্যালুট প্রদান করেন।


পরে প্রাজ্ঞ চাকমার নেতৃত্বে বেলুচ রেজিমেন্ট সৈনিকদের কুচপুত্তলিকায়, মাধুর্য চাকমার নেতৃত্বে পাকিস্তানের পতাকায়, সুদর্শী চাকমার নেতৃত্বে রক্তপিপাসু হাসিনা ও তার দালাল দীপংকর তালুকদার, বীর বাহাদুর, কুজেন্দ্র লাল’র কুশপুত্তলিলায় লাঠিসোটা সহকারে আক্রমণ করেন শিশু-কিশোররা। এছাড়া ঝিমিত চাকমার নেতৃত্বে হাসিনা সরকারের সংশোধিত সংবিধানের সংশোধনীর কপি লাথি দিয়ে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদ জানান শিশু-কিশোরা।
শেষে প্রতিবাদী নৃত্যনাট্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।

নৃত্যনাট্যের একটি দৃশ্য
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।