পানছড়িতে ব্রাশফায়ারে আহত যুব ফোরাম নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রামগড়ে বিক্ষোভ

রামগড় প্রতিনিধি ।। পানছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কর্মীদের উপর ব্রাশফায়ার ও এতে আহত যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার নেতা কল্যাণ জ্যোতি চাকমাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৬ আগস্ট ২০২১) সকাল ৯টায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র রামগড় উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক জার্মেন্ট ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক লিটন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা সভাপতি অসীম চাকমা। এতে সঞ্চালনা করেন মাইকেল চাকমা।
সমাাবেশে যুব নেতা লিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর একটি কায়েমী স্বার্থবাদী অংশ প্রমোশনের লোভে এতোটা বেপরোয়া হয়েছে যে, গণতান্ত্রিক সংগঠনসমূহকেও গণতান্ত্রিকভাবে মিটিং, সভা করতে দিচ্ছে না। তারা তাদের আইন বহির্ভূত যাকে-তাকে গুলি চালাচ্ছে। তিনি এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে ঘৃণা প্রকাশ করেন।
পিসিপি নেতা অসীম চাকমা পানছড়িতে যুব ফোরাম নেতাদের উপর গুলির ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকেগোষ্ঠী চায় ছাত্র-যুব সমাজ অধঃপতনে যাক। তারা মদ, জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে অথবা পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো গেমস্ খেলে ডুবে থাকুক। আর এর বিপরীতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কিংবা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ যখন ছাত্র-যুবকদের সচেতন করার লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে মিটিং করছে তখনই সেনাবাহিনী বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ছাত্র-যুব সমাজেরগু মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তারা বিনা উস্কানিতে গুলি করতেও দ্বিধা করছে না।
তিনি বন্দুকের গুলিকে উপেক্ষা করে ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এগিয়ে নেয়ার জন্য ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে জার্মেন্ট ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে প্রত্যক নাগরিকের সংগঠন ও রাজনৈতিক দল করার অধিকার রয়েছে। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামও দেশের সংবিধানের স্বীকৃত অধিকারমূলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যুবকদের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাহলেই সে কোন আইনের ধারায়, কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণকে ধরপাকড় করা হচ্ছে?
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কায়েমী স্বার্থবাদী সেনা কর্মকর্তারা একদিকে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, অন্যদিকে নিজেরা সন্ত্রাসী কায়দায় দিনদুপুরে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রমোশন লাভ। এই প্রমোশন বাণিজ্যের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-পীড়ন বন্ধ হচ্ছে না।
বক্তারা অবিলম্বে পানছড়িতে গ্রেফতারকৃত যুব নেতা কল্যাণ জ্যোতি চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তি ও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য যে, গতকাল (০৫ আগস্ট ২০২১) সকাল ৭টার দিকে পানছড়ি উপজেলা সদরের দিক থেকে একটি কালো মাইক্রোবাস যোগে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য লোগাঙের লেন্দিয়া পাড়ায় সাংগঠনিক কাজে কর্মরত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা-কর্মীদের উপর অতর্কিতে ব্রাশ ফায়ার করে। তাদের এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ারে সেখানে একটি বাড়িতে অবস্থানরত যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক কল্যাণ জ্যোতি চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে সেনা সদস্যরা আহত অবস্থায় তাকে আটক করে ক্যাম্পে নেয়ার পর একটি ভাঙাচোরা পিস্তল গুজে দিয়ে থানায় হস্তান্তর করে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।