পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবিতে পানছড়িতে গণসমাবেশ

0


পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

“উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছাড়, নতুন সংবিধান প্রণয়ন কর” এই শ্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বয়ত্তসাশিত অঞ্চল ঘোষনা ও স্ব-স্ব জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে চার সংগঠনের উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার (৩০ জুন ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশের আগে পানছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন লোগাং করল্যাছড়ি স্কুলমাঠে জড়ো হন। এরপর স্কুলগেট থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সীমান্ত সড়ক হয়ে বাবুড়া পাড়া বাজার ঘুরে সীমান্ত সড়ক ও দুধুকছড়র চৌমহনীতে মিলিত হয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।


সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চলনায়  বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক সুবোধ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রোনাল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মানিক পুদি চাকমা ও পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি মিঠুন চাকমা।

সমাবেশে ইউপিডিএফ সংগঠক সুবোধ চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। ২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ওপর উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছিল, যা খবই অপমানজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ বাঙালি নয়, তারা কখনো বাঙালি হতে পারে না।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণাপূর্বক সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকতি দাবি করেন। একই সাথে তিনি জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সংঘাত পরিহার করে জনগণের মুক্তির আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সন্তু লামরা ও জেএসএস’র প্রতি আহ্বান জানান।


নীতি চাকমা বলেন, ৭২’এর সংবিধানেও আমাদের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে বাঙালি হয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারই অংশ হিসেবে ২০১১ সালে হাসিনা সরকার পূনরায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই দেশের শাসকগোষ্ঠি যুগ যুগ ধরে পাহাড়ি জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি পাহাড়ে নারী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়ি নারীরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কখনও সেটলার কর্তৃক, কখনও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি নারীরা ধর্ষনের শিকার হচ্ছে।   


বান্দরবানের বম জাতিসত্তাদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যেভাবে বম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে তা অত্যন্ত বর্বর ও জঘন্য। সেখানে গর্ভবতী নারী এবং শিশুরা পর্যন্ত নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানান।

ছাত্রনেতা রোনাল চাকমা বলেন, আমরা পাহাড়িরা যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদেরকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাংবিধানিকভাবে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংঘাত জাতির জন্য কোন লাভ হয় না, সরকার ও সেনাবাহিনীকেই লাভবান করে। তাই সংঘাত বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। তিনি যারা সংঘাত চায় তাদরেকে জনগণের বর্জন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি ‌‘এগত্তর’ বা ঐক্যের আহ্বানে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর আন্দোলনকে কারা স্তব্দ করে দিয়েছে সে বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

মানিকপুদি চাকমা বলেন, আমাদের ওপর যে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তা কখনো মেনে নেয়া যায় না এবং আমরা মেনে নেব না। কারণ আমাদের নিজস্ব জাতিগত পরিচয় রয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু আজকের এই সমাবেশ নয়, আমাদেরকে আরো আন্দোলন করতে হবে। আগামীতে যেকোন আন্দোলনে অংশগ্রহন করার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান।


সমাবেশের সভাপতি যুবনেতা বরুন চাকমা বলেন, আমরা পাহাড়িরা রাষ্ট্র কতৃক  জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। এই রাষ্ট্র স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও আমাদের জাতিগত স্বীকৃতি দেয়নি।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর এই দেশে ক্ষমতার বহু পালাবদল হলেও জুম্মদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। কখনো ভূমি বেদখল করে, কখনো গণহত্য চালিয়ে,  কখনো সংঘাত বাঁধিয়ে দিয়ে, কখনো সেনা দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে জুম্মদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। যারা ঐক্য বিরোধী বিভেদ পন্থী তাদেরকে বয়কট করতে হবে।

সমাবেশ থেকে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষনা, সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং পাহাড়ে সেনাশাসন প্রত্যাহার ও সেনা অপারেশন বন্ধ করার দাবি জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More