পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত অনুপ্রবেশ অব্যাহত

0

খাগড়াছড়ি ও দীঘিানালা প্রতিনিধি॥ একটি বিশেষ মহল পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে সেই সুযোগে বহিরাগত বাঙালি অথবা মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত কয়েক দিনে খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ’ বহিরাগত বাঙালি অথবা রোহিঙ্গা পরিবারের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বহিরাগতরা ঝাঁকে ঝাঁকে বাসে করে এসে দীঘিনালা স্টেশনে নামার পর ফায়ার সার্ভিসের অফিসের পাশের খালি জায়গায় সারাদিন থাকার পর রাতে উধাও হয়ে যায়। পরদিন সকালে তাদেরকে আর সেখানে দেখা যায় না। ধারণা করা হয় তাদেরকে রাতের আঁধারে দীঘিনালা ও মারিশ্যার বিভিন্ন জায়গায় ভাগ করে নেয়া হয়।

আগতরা যে এলাকায় নতুন তা তাদের চেহারা, হাবভাব, আচার-আচরণ ও কথাবার্তা থেকে সহজে বোঝা যায়। তাদের সাথে ব্যাগ, পোটলা ও কিছু গৃহস্থালীর সরঞ্জাম থাকে। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।

খাগড়াছড়ি শহরের বাস স্টেশনের পাশে শান্তি নিকেতনেও একই চিত্র দেখা যায়। বাস থেকে নামার পর বহিরাগত পরিবারগুলো স্টেশনের পাশের এলাকায় ও শান্তি নিকেতনে সাময়িকভাবে অবস্থান করার পর রাতে উধাও হয়ে যায়।

প্রায় প্রতিদিন এভাবে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ধারণা করা হয়, সরকার অথবা সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ মহল এই বহিরাগত অনুপ্রবেশের সাথে জড়িত থাকতে পারে। একসাথে অনেক পরিবারকে না এনে তাদেরকে ভাগ ভাগ করে কয়েক দিন অন্তর লোক চক্ষুর অন্তরালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত বাঙালির অনুপ্রবেশ কোন সময় বন্ধ ছিল না। তবে ১৯৮০ দশকে জিয়াউর রহমান ও স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বৃহৎ আকারে সেটলার বাঙালির অনুপ্রবেশ ঘটনো হয়। এ সময় ৪ লক্ষ বাঙালিকে নিয়ে এসে পাহাড়িদের জমিতে জোর করে বসিয়ে দেয়া হয়।

পার্বত্য চুক্তির পরও বহিরাগত অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি, বরং তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত বাঙালির অনুপ্রবেশ ঘটে। এ কারণে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি শহরে যেখানে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পাহাড়ি জনসংখ্যা ছিল বাঙালিদের চাইতে বেশী, সেখানে বিগত দুই দশকে বাঙালি – পাহাড়ির অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৩:১। অন্যদিকে বান্দরবান শহরে এই হার আরও বেশী।

আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের সুযোগ নিয়ে সরকার ধীরে ধীরে বাঙালি অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। সরকার-সেনাবাহিনী বরাবরই চায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিজেদের মধ্যে সব সময় বিভেদ ও হানাহানি বজায় থাকুক, যাতে তারা এই সুযোগে বিনা বাধায় ও প্রতিরোধে বাঙালি অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারে।

এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পাহাড়ি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরী।

যে দল জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকারের জন্য সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত হবে না, বহিরাগত অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে না, যে দল সেনাবাহিনী  ও সরকারের দালালী ও লেজুড়বৃত্তি করবে, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখতে চাইবে, সে দলকে ইতিহাস কখনোই ক্ষমা করবে না।

যে সব জুম্ম রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনীর সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট তাদের নেতাদের অবশ্যই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে হবে এবং জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সেনা খপ্পড় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সর্বোপরি নিজেদের অস্তিত্বের জন্য জুম্ম জনগণকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং ভয়কে জয় করে সংগ্রামে সামিল হতে হবে। যারা আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের প্রতিহত করতে হবে।
————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More