পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস নিয়ে দীঘিনালায় আলোচনা সভা
দীঘিনালা : পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় “পার্বত্য চট্টগ্রামের অতীত-বর্তমান দুর্দশার পেছনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের ভূমিকা এবং বর্তমান প্রজন্মের করণীয়” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য অনুসন্ধানী গবেষণা সেল’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সকাল সাড়ে ১০ টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি নিকেল চাকমা সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা। এছাড়াও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর দীঘিনালা উপজেলার প্রধান সংগঠক সুকীর্তি চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
আলোচনাসভায় বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের অতীত ও বর্তমানে পাহাড়ি জনগণের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এক সময় স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ছিল। পাহাড়িদের পূর্বসূরীগণ মোঘল, ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল প্রতিরোধ সংগ্রাম করেছিল। মোঘল শাসনের পর পার্বত্য অঞ্চল ব্রিটিশ শাসকদের হাতে চলে গেলে তারা পাহাড়ি জনগণের উপর তাদের শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই শোষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে তৎকালিন পাহাড়ি রাজারা বৃটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখেছিল।
বক্তারা আরো বলেন, বৃটিশ শাসকরা বাণিজ্যক সূত্রে পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করে শাসন-শোষণ শুরু করে এবং ১৮৬০ সালের ১ আগস্ট তথাকথিত এক আইনের মাধ্যমে এ স্বাধীন পার্বত্য রাজ্যকে ‘জেলায়’ রূপান্তর করে। কিন্তু চাকমা রাণী ‘কালিন্দী রাণী’ ঔপনিবেশিক শাসকদের অন্যায় শাসন মেনে নেননি। ফলে তার মৃত্যুর পর ১৮৭৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসকরা সরাসরি শাসনকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। তারা বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বৃটিশ ঔপনিবেশি শাসন অবসানের সময় ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান নামে দু’টো রাষ্ট্র আলাদা হয়ে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্রিটিশ শাসকদের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে। পাহাড়ি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তানি বেলুচ রেজিমেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। সে সময় পাহাড়িদের মধ্যে সঠিক নেতৃত্ব না থাকার কারণে এবং সঠিক সময়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে না পারার কারণে আজ পর্যন্ত পাহাড়ি জনগণকে পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
বক্তারা, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি জনগণের অতীত ও বর্তমানের এই দুর্দশার পেছনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের ভূমিকা ছিল বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়িদের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং তৎকালীন সময়ের নেতৃত্বের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সাহসীকতার সাথে লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হতে হবে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত নির্যাতিত পাহাড়ি জনগণের বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুবক-নারী সমাজসহ সর্বস্তরে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।