পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দায় এড়াতে পারে না- অমল ত্রিপুরা
ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩

পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় মদদে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
দিনাজপুর পার্বতীপুরে ছোট জাতের সন্তান আখ্যায়িত করে ৫ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি না নেওয়ার প্রতিবাদে আজ বুধবার (১৮ জানুয়ারি ২০২৩) বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমবেশে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ জয় ভীম ছাত্রযুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত দাষের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা.হারুনুর রশীদ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উৎপল বিশ্বাস, সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট ইফতেখার বাবু, মানবাধিকার কর্মী মাহবুল হক।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা আরো বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকারে মধ্যে শিক্ষা হল অন্যতম। কিন্তু ছোট জাত অর্থাৎ বর্ণবৈষম্য ধুঁয়ো তুলে পার্বতীপুরে ৫ জন শিশু শিক্ষার্থীকে স্কুলে ভর্তি না করা খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে তাদের নাগরিক অধিকার হতে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করার সুযোগ না পায় তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা প্রশ্ন থেকে যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিস্থিতি তুলে ধরে অমল ত্রিপুরা বলেন, পার্বতীপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এটি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পাহাড়-সমতলে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ওপর নিপীড়নেরই অংশ মাত্র। এই সরকারের আমলে কয়েক বছরে মধ্যে অনেক সাম্প্রদায়িক হামলা দেখতে পেলাম তার মধ্যে গাইবান্ধায় সাওতালদের বাড়িতে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী কর্তৃক অগ্নিসংযোগ, দিনাজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ বহু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তার ওপর সরকার-রাষ্ট্রীয় বাহিনী যুগ যুগ ধরে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। পাহাড়ে সেনা শাসন জারি রেখে এই দমন-পীড়ন, নির্যাতন ও খুন-গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। পাহাড়িদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কিছুতেই দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে অমল ত্রিপুরা বলেন, সেখানে এত বছর বিচার বহির্ভুত হত্যা, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, খুন-গুমসহ যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশন কোন ভূমিকাই পালন করেনি। খাগড়াছড়ি স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করেও তারা কোন রিপোর্ট প্রকাশ করেনি।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সফরত মানবাধিকার কমিশনের টিমকে সমালোচনা করে বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি কমিশনের সফর দলটি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ পথে তাদের সাথে রামগড়ে মানববন্ধনকারী এলাকার জনগণ কথা বলতে চাইলে তারা জনগণের সাথে কথা বলেনি। উল্টো তাদের গাড়ি বহরের সাথে থাকা বিজিবি সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনে বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনরত জনগণের কাছ থেকে জোরপূর্বক ব্যানার কেড়ে নিয়েছে। খাগড়াছড়িতে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘন্টা রৌদ্রে দাঁড়িয়ে কমিশনের সাথে দেখা করার আশায় মানববন্ধন করা ভুক্তভোগী জনগণের সাথেও মানবাধিকার কমিশন দেখা করেনি, কথা বলেনি। এটাও এক প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। এমন মানবাধিকার কমিশনের কাছ থেকে জনগণ কি আশা করতে পারে?
তিনি পার্বতীপুরে শিশু শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন তুলে নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের আহ্বান জানান।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যের হেমন্ত দাষ বলেন, প্রায়শই দেখা যায় নিচু জাতের নামে শুধু জন্ম ও পেশাগত কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য করা হয়। যারা পরিচ্ছন্নতা কর্মী কিংবা নরসুন্দরের কাজ করে, জুতা সেলাইসহ নানা পেশায় জড়িত তাদেরকে সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়, বঞ্চিত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় পার্বতীপুরে এই শিশুদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়নি। অপরদিকে দেখা যায় সমাজে এ ধরনের অন্যায় এবং অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরেও সরকার কোন সুষ্ঠু বিচার কিংবা এসকল অন্যায় রোধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। তাই জাতপাতের নামে অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আজকে আমাদের দাঁড়াতে হবে।

সৌরভ রায় বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ বিভিন্ন জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের মানুষের দেশ। শিক্ষা প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার, এই শিশুদের ভর্তি না নিয়ে স্কুলগুলো যে জঘন্য কাজ করছে সরকার সেসব দেখছে না। কারণ এ সরকার জনগনের সরকার নয়। ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতির মাধ্যে জনগণের উপর ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। তাই সারাদেশে দেশে যখন বৈষম্য তখন এমন ন্যাক্কারজনক আচরণ যারা করছে তাদের বিচার করতে পারছে না সরকার।

সমাবেশে বক্তারা সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, অবিলম্বে নিচুজাতের নামে বৈষম্য করা বন্ধ করতে হবে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ভর্তি বঞ্চিত পাঁচজন শিশুকে ভর্তি নেওয়া আর বিলম্ব হলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করা হবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, নারী অধিকার কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট মার্জিয়া প্রভা, বাংলাদেশ হরিজন সেচ্ছাসেবী ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি সুনীল বাঁশফোর, ঢাকা হেলা বাল্মিকী সমাজ কল্যান সংগঠনের সংগঠক অমরদীপ।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন