পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে রামগড়ে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ

0

রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে রামগড়ে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ। ছবি: রামগড় প্রতিনিধি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনীর সন্ত্রাসসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রামগড় ইউনিট।

আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি ২০২৩) সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র রামগড় ইউনিটের সংগঠক এডিশন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শুভ চাকমা ও রামগড় উপজেলা শাখার নেতা রণি ত্রিপুরা এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা সভাপতি অসীম চাকমা। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক নিতুন চাকমা।

সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতা এডিশন চাকমা বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে রেখেছে। অন্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে মানুষের মুক্তচিন্তা স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকার ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাসহ সরকারের সমালোচনাকারী অনেককে গুম-খুন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্খীসহ সাধারণ জনগণের উপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে। সাজেক, লংগদু, তাইন্দং, মহালছড়ি, রামু, নাসিরনগরসহ অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রবাহিনী ও তাদের পোষ্য সেটলার-ভূমিদস্যুরা বাবুছড়া, মাইসছড়ি, সাজেক, লামাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভূমি বেদখল ও বেদখল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশীদের প্রবেশ বন্ধ রেখে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ইউপিডিএফ সংগঠক এডিসন চাকমা। ছবি: রামগড় প্রতিনিধি

তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে আগামীকাল রবিবার (১৫ জানুয়ারি) খাগড়াড়ি জেলায় ঘোষিত সকাল ৬টা হতে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য রামগড় উপজেলার বাস-ট্রাক-জীপ সমিতি, মালিক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানান এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলী সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা শুভ চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন শুরু হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচনার সময় পাহাড়িদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ফলে এ অঞ্চলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পাহাড়িদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে পাহাড়িদের ওপর দমন-পীড়নসহ ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত করা হয়। সমতল ভূমি থেকে চার লক্ষাধিক বাঙালিকে অনুপবেশ করিয়ে পাহাড়িদের জায়গা-জমি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ ও জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার চুক্তি স্বাক্ষর হলেও এ অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হয়নি। অপারেশন উত্তরণের নামে সেনাশাসন জারি রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে পার্বত্য প্রবেশে বাধা-নিষেধ আরোপ করে রাখা হয়েছে।

আরেক যুব নেতা রনি ত্রিপুরা বলেন, রাষ্ট্র এদেশের বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতিসত্তাদের বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জনগোষ্ঠিদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমাদেরকে নিপীড়ন চালিয়ে, হত্যা করে বিলুপ্তির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে এ রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট স্বৈর শাসকগুলো। তারা আমাদেরকে কখনো উপজাতি, কখনো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি আখ্যায়িত করছে, সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী আমরা স্বাধীনচেতা স্বতন্ত্র জাতি ছিলাম। তাই ছাত্র-যুবকদের সচেতন হয়ে, সঠিকভাবে আমাদের বীরত্বের ইতিহাস জেনে গৌরবময় ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি করতে পূ্র্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।

পিসিপি নেতা অসীম চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আজ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু পরিবেশে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক স্কুল, কলেজে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের তল্লাশি, হুমকি, নজরদারি শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More