পার্বত্য চট্টগ্রামে র্যাব মোতায়েনের সিদ্ধান্ত পাহাড়ি জনগণের সাথে শত্রুতার সামিল- বৈসাবি শুভেচ্ছা বার্তায় ইউপিডিএফ
ডেস্ক রিপোর্ট, সিএইচটিনিউজ.কম
পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত খীসা ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি (বৈসুক-সাংগ্রাই-বিঝু) উৎসব প্রাক্কালে আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত দীর্ঘ এক শুভেচ্ছা বার্তায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানিয়ে সবার সুস্বাস্থ্য, সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। এছাড়া তিনি পাহাড়ে র্যাব-এর নতুন ইউনিট মোতায়েনের সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান এবং সাম্প্রতিক কালে দেশে ‘সংবিধান’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’–ইত্যাদি বিতর্কের ব্যাপারেও নিজ দলীয় অভিমত তুলে ধরে মন্তব্য করেছেন।
সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত বৈসাবি শুভেচ্ছা বার্তায় প্রসিত খীসা র্যাব-এর নতুন ইউনিট ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েনের সরকারি সিদ্ধান্তকে পাহাড়ি জনগণের সাথে খোলাখুলি শত্রুতামূলক মন্তব্য করেন এবং অনতিবিলম্বে উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় তদজনিত যে কোন পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী হতে হবে বলেও তিনি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন।
ইউপিডিএফ নেতা দেশের ‘’৭১-এর মুক্তি যুদ্ধ’, ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’, ‘সংবিধান’–ইত্যাদি বিষয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে নিজ দলীয় অভিমত তুলে ধরে বলেন,‘দেশের স্বাধীনতার জন্য সাধারণ মানুষই সর্বস্ব ত্যাগ করে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, যার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতি ও জনগোষ্ঠীও ছিল, এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য। এ সত্য অস্বীকার বা আড়াল রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একতরফাভাবে স্বাধীনতার কৃতিত্ব দাবি করতে চায়, যা দেশপ্রেমিক সাধারণ নাগরিক কারোর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশেষতঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি হিসেবে জাহির করতে গিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শেখ মুজিব ও জিয়া উভয়ের দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান ছিল, অন্যদিকে দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, উভয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে দূরদর্শী নীতি প্রণয়ন করতে সক্ষম হন নি। একশ্রেণীর নেতা-কর্মী সংসদে-রাজপথে এবং দেশের বাইরে নানা ধরনের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের ভূমিকাকে বিতর্কিত করছে বলে মন্তব্য করেন।
দেশের বর্তমান সংবিধান বিষয়ে প্রসিত খীসা বলেন,‘এ সংবিধান বহু সংশোধনীতে জীর্ণশীর্ণ দশাগ্রস্ত, এটি জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে অকার্যকর। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের স্বীকৃতি ও অধিকার এতে নেই। যে দল ক্ষমতায় আসীন হয়, সে দলই সংবিধানকে নিজেদের স্বার্থে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগণ ও সংখ্যালঘু জাতিসত্তা- জনগোষ্ঠী কারোর স্বার্থই এতে সংরক্ষিত নয়, একে পবিত্র সংবিধান আখ্যায়িত করার কোন মানে নেই, যত দ্রুত সম্ভব এটি বাতিল করে জনগণের নতুন সংবিধান রচনা করা দরকার।’
গেল দশম সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারেও ইউপিডিএফ নেতা সমালোচনা করেন এবং বলেন,‘ব্যাপক জালিয়াতি ও কারচুপির মাধ্যমে একতরফা নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় দেশে জনমনে বিতর্ক ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। এ সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।’ ইউপিডিএফ নেতা প্রদত্ত বার্তায় জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে অনতিবিলম্বে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরপূর্বক নির্বাচন দেবার আহ্বান জানিয়েছেন।