পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা দমন-পীড়নের প্রতিবাদে কাউখালীতে বিক্ষোভ

কাউখালি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা অভিযানের নামে দমন-পীড়নের প্রতিবাদে এবং সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ প্রত্যাহারের দাবিতে রাঙামাটির কাউখালিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্র জনতার সংগ্রাম পরিষদ ও এলাকাবাসী।
সমাবেশ থেকে স্কুল ভবন দখল করে ‘অস্থায়ী ক্যাম্প’ বানানো, নির্বিচারে বাড়িঘরে তল্লাশি, নারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, লুটপাট, ধরপাকড়, হয়রানি, স্কুলের কার্যক্রম ব্যাহত করা ও অবর্ণনীয় জনদুর্ভোগ সৃষ্টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
আজ রবিবার (৩১ আগষ্ট ২০২৫) দুপুর ১:৩০টার সময় কাউখালী উপজেলার নোয়া পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে চেলাছড়া আবাসিক এলাকা ঘুরে পূনরায় নোয়া পাড়ায় এসে সমাবেশ করা হয়। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাত শতাধিক ছাত্র জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ধরণী চাকমার সভাপতিত্বে ও কাউখালি সরকারি ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অজয় মার্মার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পোয়া পাড়া সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পাস শিক্ষার্থী সুইহ্লামং মার্মা, এলাকার মুরুব্বি চিংসানু মার্মা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কাউখালি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক একা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক দীপায়ন চাকমা ও ইউপিডিএফের কাউখালী ইউনিটের সংগঠক মিজুক চাকমা।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা অপারেশনের নামে হয়রানি, লুটপাট বাড়ি-ঘর তল্লাশি চালানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের পর দেশে কিছুটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো আগের মতোই সেনাশাসনের মাধ্যমে নিপীড়ন জারি রাখা হয়েছে। ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার যখন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়, তখন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা অভিযানের মাত্রা আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তারা বলেন, আমাদেরও শান্তিতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কিন্তু সেনাবাহিনী আমাদের এই অধিকার হরণ করছে। বিনা অনুমতিতে যখন তখন বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করে টাকা পয়সা, ডক্যুমেন্ট, দলিলপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দিচ্ছে।
সেনা অপারেশনের কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, জনগণ নিজের বাড়িতে, ক্ষেতে খামারে দোকানে, হাটে কোন দিকেই নিরাপদ থাকতে পারছে না। সবসময় আতঙ্কের মধ্য দিনযাপন করতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। কারণ সেনাবাহিনী অভিযানের নামে এসে আমাদের স্কুলঘর দখল করে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। নারীদের সব সময় ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। কারণ অতীতের মতো বর্তমানেও সেনা অপারেশনকাালে নারীদের সাথে যৌন নিপীড়ন, হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটছে।

বক্তারা সেনাবাহিনী অস্ত্র উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করে সাধারণ নিরীহ মানুষদের আটক করছে। সেনা কর্মকর্তারা প্রমোশন বাড়ানোর জন্য নিরীহ সাধারণ মানুষদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেনারা বলে তারা সন্ত্রাসী খোঁজে। কিন্তু আসল সন্ত্রাসীদেরকে তারাই পুষে রাখে এবং তাদেরকে দিয়েই তারা হত্যা, অপরহণ, চাঁদাবাজি করছে। অথচ তারা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের লোকজন খোঁজে গ্রামে গ্রামে হয়রানিমূলক অভিযান চালাচ্ছে। জনমনে ভীতি সঞ্চার করছে।
বক্তারা বলেন, সেনা অভিযানের নামে নিপীড়ন-হয়রানি, তল্লাশি জনগণ আর মেনে নেবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ছাত্র-জনতার প্রস্তুত রয়েছে।

সমাবেশ থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো:
ক) অবিলম্বে অপারেশনের নামে তল্লাশি, লুটপাট, হয়রানি, ও বেআইনী গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে।
খ) যেসব টাকা ও দলিলপত্র লুট করে নেয়া হয়েছে সেগুলো ফেরত দিতে হবে।
গ) প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে ও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান বন্ধ করতে হবে।
ঘ) পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
ঙ) সমতলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও গণতন্ত্র দিতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।