পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৪৭ সালে ‘পাক অগ্রাসন’ বিষয়ে মহালছড়িতে আলোচনা সভা

0

মহালছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অগ্রাসন’ বিষয়ে মহালছড়িতে ইউপিডিএফের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট ২০২৪) দুপুর ২টার সময় ‘ব্রিটিশদের রুখে দিয়েছিল রণু খাঁরা, ’৪৭-এ পাকিস্তান মেনে নেয়নি স্নেহ কুমার বাবুরা, ফ্যাসিষ্ট হাসিনাকে হটাতে লড়েছি আমরাও’ এই শ্লোগানে  সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে উক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় ইউপিডিএফ’র মহালছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক মিত্র চাকমার সভাপতিত্বে ও সংগঠক প্রকাশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক মংগ্রী মার্মা, ৩নং ক্যায়াংঘাট ইউপি সদস্য ওয়াশিংটন চাকমা ও ৪নং ইউপি সদস্য গুন সিন্ধু চাকমা।

সভা শুরুর আগে সকল শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।


সভায় মংগ্রী মার্মা বলেন, গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে দেশ আজ নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে। সমতলের মানুষ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্ত হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা পাহাড়িরা আজও সামরিক শাসনের বুটের তলায় পিষ্ট। সমতলের জন্য বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হলেও আমরা পাহাড়ে এখনও বৈষম্যের শিকার।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি পাহাড়ে শিক্ষার্থীরা ঐক্যের আহ্বানে রাজপথে নেমেছে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী আজও কিছু দুষ্কৃতকারীকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে যেন পাহাড়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে না উঠে। তার প্রমাণ গত ১৮ আগষ্ট চেঙ্গী স্কেয়ারে শান্তিপূর্ণ স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে হামলা। তিনি পাহাড়কে নিরাপদ ও নিপীড়নমুক্ত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ইউপি সদস্য গুন সিন্ধু চাকমা ও ওয়াশিংটন চাকমা একই সুরে কথা কথা বলেন। তাদের উভয়ে তাদের আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো ‘স্বাধীন’ হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের পাহাড়ে আজো বৈষম্য রয়ে গেছে। এযাবত কোনো সরকার আমাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেনি। তাই আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সুদৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানাই। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র আন্দোলন থেকে যে ঐক্যের দাবি উঠেছে তাতে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।  

আলেচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে মিত্র চাকমা বলেন, আজ ২০ আগষ্ট আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্য এক অভিশপ্ত দিন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশায় স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে ১৫ আগষ্ট রাঙামাটিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়। আর বার্মার সাথে যুক্ত হওয়ার আশায় বান্দরবানে বার্মার পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে। আর ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই পাকিস্তান তার বেলুচ রেজিমেন্ট পাঠিয়ে ভারত ও বার্মার পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দখল করে নেয়। যার ফলে শুরু হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে আরেক কালো অধ্যায়। পরবর্তীতে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কোন সুফল পায়নি। স্বাধীন দেশে পাহাড়িদেরকে পরাধীন হয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের জাতীয় অস্তিত্ব ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈষম্য, নিপীড়ন আগের মতোই রয়েছে। পাহাড় আজো রয়েছে সেনাশাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ। পাহাড়ে এই নিষ্ঠুর সেনা শাসন জারি রেখে বাংলাদেশ কখনো নিপীড়নমুক্ত, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবিলম্বে পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More