পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নয়, সেনাশাসন তুলে নিন- সুনয়ন চাকমা

0

ঢাকা প্রতিনিধি।। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নয়, সেখানে যুগ যুগ ধরে সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। ফলে সেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের ক্ষমতার বলে পাহাড়ি জনগণের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতনের মাত্রা ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরও বলেছেন, পাহাড়কে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারপূর্বক সেনাশাসন তুলে নিয়ে সেখানেও সমতলে ন্যায় শাসন ব্যবস্থা চালু করুন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার (২৫ মার্চ ২০২২) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সোপার্জিত চত্ত্বরের সামনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ আট ছাত্র সংগঠনের আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি উক্ত আহ্বান জানান।

পিসিপি নেতা বলেন, সারাদেশে যেভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে এদেশের সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী কিভাবে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে সরকারে কোন খবর নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। বাজারে এক শ্রেণী ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের ফলে সাধারণ জনগণকে আজ এই দুর্গতির শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এক দিকে সারাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষকে শোষণ করা হচ্ছে, অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীকে দিয়ে দমন-পীড়ন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। গত ১৫ মার্চ খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় ইউপিডিএফ-এর সংগঠক নবায়ন চাকমাকে সেনা হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ মালে পিসিপি নেতা রমেল চাকমাকে হত্যা করা হয়েছিল। সরকার ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা, সাম্প্রদায়িক হামলা, খুন-গুমের কোন বিচারের কোন উদ্যোগ সরকারের নেই। ১৯৮০ সালে আজকের এই দিনে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতিতে সেনাবাহিনী ও সেটলার কর্তৃক গণহত্যা সংঘটিত গণহত্যার ৪২ বছরেও বিচার হয়নি।

তিনি দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধসহ নবায়ন চাকমার হত্যাকারী সেনা সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।

ছাত্র ফন্টের সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের জনগণ দিশেহারা। তারা কিভাবে জীবন নির্বাহ করবে তা নির্ধারণ করতে পারছে না। দেশের সকল নাগরিকরা তাদের ন্যূনতম অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি নিজেদের অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।     

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিঠু সরকার বলেন, সরকার জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করতে পারিনি, ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারের দ্রব্যমূল্যর দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের রক্ষা করে সাধারণ শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষদের হয়রানি ও শোষণ করছে।

তিনি আরো বলেন, দেশে মতপ্রকাশের কোন স্বাধীনতা নেই। যারা মতপ্রকাশের জন্য লড়াই সংগ্রাম করছে তাদের নবায়ন চাকমার মত হত্যার শিকার হতে হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয়। তিনি সরকারে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনউদ্দিন বলেন, দেশের বাজার ব্যবস্থাসহ সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ী শ্রেণীরা। বর্তমান সরকার ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশ সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। দেশের প্রত্যেকটি স্থানে নৈরাজ্য চলছে। সরকারি দলীয় লোকেরা, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা সভা সমাবেশের হামলা করছে। তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে জাহিদ সুজন বলেন, সরকার জনগণের অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই সরকারের উচিৎ পদত্যাগ করে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সরকার সংসদে ব্যবসায়ীদেরকে ঢুকিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করছে। যার ফলে জনগণের ওপর শোষণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জনগণের সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

ছাত্র মৈত্রী সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায় বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে ধনী ও ব্যবসায়ীদের মুনাফা তৈরি করার কারখানা হিসেবে। এখানে জনগণের স্বার্থ নেই, জনগণ তাদেরকে নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

সমাবেশে সোহবত শোভন বলেন, জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দ্রব্যমূল্য কমাতে হলে সকল শ্রেণী পেশাজীবী মানুষকে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

সমাবেশ থেকে বক্তারা দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা, শ্রমজীবী মানুষের জন্য রেশনিং চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

গতকাল বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে সোপার্জিত চত্ত্বরের সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের সভাপতি জয়দীপ ভট্টচার্যের সভাপতিত্বের ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি অনিক রায়ের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনরে সভাপতি মিতু সরকার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈন উদ্দিন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায়, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনার সম্পাদক সোহবত শোভন প্রমুখ।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More