পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন

0

রাঙামাটি ।। “জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে বেগবান করুন” এই শ্লোগানে গতকাল শুক্রবার (৭ মে ২০২১) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর রাঙামাটি জেলা শাখার ৮ম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।

এতে নিকন চাকমাকে সভাপতি, তনুময় চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সতেজ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রাঙামাটি সদর এলাকায় গতকাল সকাল ১০টায় ‘পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল..’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিল উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাঙামাটি জেলা সমন্বয়ক শান্তিদেব চাকমা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিকন চাকমা।

এরপর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন রিমি চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত উক্ত কাউন্সিলে পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিকন চাকমার সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক নেপচুন চাকমা সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাঙামাটি জেলা সমন্বয়ক শান্তিদেব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অংকন চাকমা, চবি শাখার প্রতিনিধি সোহেল চাকমা ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিনিধি নিউটন চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি জেলা কমিটির শাখার সদস্য সতেজ চাকমা।

ইউপিডিএফ নেতা শান্তিদেব চাকমা বলেন, ‘মুঘল-বৃটিশ-পাকিস্তান সময়কালে পাহাড়িরা বরাবরই শোষণ, বঞ্চনা ও নিগ্রহের শিকার হয়েছে। বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশে তার চেয়ে আরো বহুগুণ বেশি নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের মর্যাদা তো রক্ষিত হয়নি উপরন্তু পার্বত্য জনপদে আরো বেশি নিপীড়ন-নির্যাতন, বৈষম্য জারি রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে সরকার যেন ভুলে না যায়। একই সাথে তিনি পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মধ্য দিয়ে চাপিয়ে দেওয়া বাঙালি জাতীয়তা প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।  

পিসিপি’র নেতা-কর্মীদের আরো যোগ্য, দক্ষ ও গতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার প্রধান শক্তি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য ছাত্র সমাজকেই নেতৃত্বের ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হবে। আর পিসিপি’র দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পিসিপি নেতা-কর্মীদের আরো সুদক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা জিকো ত্রিপুরা বলেন, একের পর এক ভূমি বেদখল, সেটলার বসতি স্থাপন, ক্যাম্প সম্প্রসারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাগুলোকে বিলুপ্ত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি প্রশ্ন রাখেন, স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে এসেও পাহাড়ের নাগরিকদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজন দেশের শাসকরা আদৌ উপলব্ধি করে কিনা?

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে আমাদের আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তিনি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী নীতি চাকমা বলেন, জাতির অস্তিত্ব সংকটের সময়ে নারীদের অবদান যেমন অনস্বীকার্য তেমনি নারীদের আরো বেশি রাজনীতি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদেরকে কল্পনা চাকমা, প্রীতি লতাদের মতো নারীদের অনুসরণ করে সমাজে নারী জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা হয় সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নারী-পুরুষকে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

পিসিপি নেতা অংকন চাকমা বলেন, কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষা করতে ছাত্র সমাজকে প্রতিশ্রুতিশীল হতে হবে। বর্বরোচিত শোষণের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় মনোনিবেশ করার তাগিদ দেন তিনি। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য স্বজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা এবং পাশাপাশি উন্নততর জাতিসত্তাদের সংস্কৃতিকে আয়ত্ত করার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

আলোচনা শেষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অংকন চাকমা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে নিকন চাকমাকে সভাপতি, তনুময় চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সতেজ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। এ সময় কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত সকলে ঘোষিত নতুন কমিটিকে স্বাগত জানান এবং পাশ করে নেন। পরে অংকন চাকমা নতুন কমিটির সদস্যবৃন্দকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

কাউন্সিলের সমাপনী পর্বে পহর চাকমা’র সঞ্চালনায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে দেশাত্ববোধক ও প্রতিবাদী গান, কবিতা, নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

পরে নতুন কমিটির সভাপতি নিকন চাকমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কাউন্সিল অধিবেশন সমাপ্ত করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More