পিসিপি’র ১৯তম খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি গঠন: সভাপতি শান্ত চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক রুপান্ত চাকমা

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩

শপথ নিচ্ছেন নতুন কমিটির সদস্যরা।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ১৯তম কাউন্সিলে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি হিসেবে শান্ত চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রুপান্ত চাকমা নির্বাচিত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার (১৩ মার্চ ২০২৩) খাগড়াছড়ি জেলা সদর এলাকায় দিনব্যাপী কাউন্সিলে এ কমিটি গঠন করা হয়।

কাউন্সিলের ১ম অধিবেশন শুরুতে দলীয় সঙ্গীত “পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল” গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সেনা-গোয়েন্দা নজরদারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও, লড়াই সংগ্রামে বিভেদ সৃষ্টিকারী দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন” এই আহ্বানে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নরেশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন চাকমা। কাউন্সিলে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি ইউনিটের অন্যতম সংগঠক বিপুল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।

কাউন্সিলে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলা শাখা কমিটি থেকে প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এবং শুভাকাঙ্ক্ষী-সমর্থকরা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

কাউন্সিল অধিবেশনে বিপুল চাকমা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠী মিলিত ষড়যন্ত্র, দমন-পীড়ন, অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে পাহাড়ের সকল সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে রুখে দাঁড়াতে হবে। জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলকে এগিয়ে নিতে পাহাড়ে ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের মাধ্যমে জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে সেনাশাসন জারি থাকার কারণে সাধারণ মানুষ অনিরাপদ ও প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতিতে দিন কাটাচ্ছেন। এই দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করতে হবে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাহাড়ে নিপীড়িত জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে আপোষহীন লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল নান্যচরে ছাত্রনেতা রমেল চাকমা সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মারা যায়। তার লাশকে পর্যন্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট মুখোশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে স্বনির্ভরে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছাত্রনেতা তপন, এল্টন ও যুবনেতা পলাশ চাকমাসহ ৬ জনকে হত্যা করা হয়।

বিপুল চাকমা বলেন, চুক্তির আগে জেএসএস পাহাড়ি জনগণের কাছে আওয়ামী লীগকে প্রমোট করেছে। তার মাসুল আজ জাতিগতভাবে সকলকে দিতে হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে জেএসএস-এর চুক্তি বিষয়ে গোপন সমঝোতা হয়। এরপর জেএসএস নেতাকর্মীরা প্রচার করতে থাকেন যে পাহাড়ের শান্তির জন্য আওয়ামী লীগ জনদরদী দল এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে জনগণকে বাধ্য করা হয়।

পিসিপি সভাপতি সুনয়ন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোনো প্রান্তে অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ছাত্র সমাজকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নিছক কোন সংগঠন নয়, শাসকগোষ্ঠীর নানা ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে লড়াই পরিচালনা করা যেকোনো গতিশীল সংগঠনের জন্য গর্বের বিষয়। নব্বই দশকে পাহাড়ি ছাত্রসমাজের সেই অগ্রযাত্রা আজও চলমান, তাই শাসকগোষ্ঠী সবসময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের অগ্রযাত্রায় বিঘ্নিত করতে চেয়েছে এবং চাচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায্য অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ থেমে থাকবে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

যুব নেতা লিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য পাহাড়ের সকল ছাত্র -ছাত্রী, যুবসমাজ এবং নারী সমাজকে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে যুবসমাজ নেশাদ্রব্যে আসক্ত হয়ে আন্দোলনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। পাহাড়ের আন্দোলন স্তিমিত করতে সরকার ও শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন রকম কূটকৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। বিপথগামী অনেকে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক সমস্যা। তাই এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

এইচডব্লিউএফ নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পাশাপাশি নারীদের সচেতন হয়ে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। শাসকগোষ্ঠী নানা কলাকৌশলের মাধ্যমে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় জনগণকে নির্যাতন চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মদদে ভূমি বেদখল ও নারী নিপীড়নের ঘটনা প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে । বর্তমানে আমাদের পাহাড়ি নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। আমাদের সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যেতে হবে এবং নারী সমাজকে সামনের কাতারে এসে ভূমিকা পালন করতে হবে।

সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সকল ধরনের বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেনা-গোয়েন্দা নজরদারী ভেস্তে দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করতে হবে।

কাউন্সিলের ২য় অধিবেশনে পুরনো কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা করে প্রস্তাবনা আকারে ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি হাউজে উপস্থাপন করা হয়। উপস্থিত সকলে করতালির মাধ্যমে প্রস্তাবিত কমিটিকে পাশ করেন। এতে শান্ত চাকমাকে সভাপতি, রুপান্ত চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও তৃষ্ণাঙ্কর চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

পরে নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুনয়ন চাকমা।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More