বন্দুকভাঙার মারিচুক থেকে সেনা প্রত্যাহার, তবে ক্যাম্প স্থাপনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত

মারিচুকে কিরণ জ্যোতি চাকমার বসতভিটা ও বাড়ি, যেখানে গত ১ মাসের অধিক সেনা সদস্যরা অবস্থান করেছিল।
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাঙামাটির সদর ইউনিয়নের বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের মারিচুক পাহাড় থেকে আজ সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সাথে সাথে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সদস্যরা সেখানে অবস্থান নিয়েছে। এতে সেনাবাহিনী ও জেএসএস সন্তু চক্রের মধ্যে গোপন বোঝাপড়া রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল মারিচুক পাহড়ে অবস্থান নিয়ে সেখানে একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপনের ষড়যন্ত্র করে আসছে।
এর বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ ও ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন রাঙামাটি সদরে মানববন্ধনসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ ও পোস্টারিং করে। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি এলাকাবাসী ও যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের পক্ষ থেকে মারিচুকে ক্যাম্প স্থাপন না করার দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এলাকাবাসীর প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও আপত্তির প্রেক্ষিতে আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) দুপুর ১:০০টার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা মারিচুক ছেড়ে চলে যায় বলে জানা গেছে।
তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে চলে যাওয়ার সাথে সাথে জেএসএস সন্তু গ্রুপ সেখানে অবস্থান নেয়।
এলাকাবাসীর ধারণা সেনারা গোপন বোঝাপড়ার ভিত্তিতে মারিচুক পাহাড়টির দখল সন্তু গ্রুপের হাতে তুলে দিচ্ছে, অথবা সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য নতুন কোন ষড়যন্ত্র করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন মুরুব্বী সিএইচটি নিউজকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা মারিচুক থেকে চলে যাওয়ার আধ ঘন্টা পরেই জেএসএস সন্তু গ্রুপের একটি সশস্ত্র দল মারিচুকে এসে উপস্থিত হয় এবং উপর্যুপরি ফাঁকা ব্রাশফায়ার করতে শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে থেমে থেমে তারা ব্রাশফায়ার করলে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
সেনাবাহিনী না থাকলে মারিচুক এলাকায় সন্ত্রাসীদের রাজত্ব কায়েম হবে এমন ধারণা সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে সন্তু গ্রুপ ফায়ার করছে বলে তিনি মনে করেন।
এলাকার এক শিক্ষক বলেন, যেখানে এলাকাবাসীর আপত্তিতে সেনা সদস্যরা চলে গেছে, সেখানে জেএসএসের লোকজন এসে ব্রাশফায়ার করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে আবারো সেনাবাহিনীকে মারিচুকে আনার ষড়যন্ত্র করছে। জেএসএস যে কত গভীরে পঁচে গেছে তা তাদের এই আচরণের মাধ্যমে বোঝা গেছে।
তিনি জেএসের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জেএসএস যদি প্রকৃত অর্থে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করতে চায় তাহলে তাদের উচিত জনগণের স্বার্থে কাজ করা, জনগণের জন্য দুঃখ-দুর্দশা সৃষ্টি করা নয়। গত এক মাসে সেনাবাহিনীর অবস্থানের কারণে মারিচুকসহ আশেপাশের এলাকায় বসবাসরত জনগণকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অথচ জেএসএস এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেনি।
তারা একদিকে দায়সারাভাবে চুক্তি মোতাবেক সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা বলে থাকে, অন্যদিকে তারা নিজেরাই ক্যাম্প স্থাপনের জন্য সেনাবাহিনীর সাথে ষড়যন্ত্র করে। তাদের এই দ্বিমুখী আচরণ দেখে জনগণ তাদের প্রতি খুবই বীতশ্রদ্ধ।
তিনি সেনা প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ শান্তিতে থাকতে চাই। তাই আমরা চাই, মারিচুক পাহাড় থেকে সেনা সদস্যদের মতো জেএসএস সন্তু গ্রুপও চলে যাক।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।