বর্মাছড়ি পরিস্থিতি: সেনাদের এলাকা ত্যাগ, কোটি টাকার কাঠ জব্দ
সন্তু গ্রুপের চক্রান্তে সেনা ক্যাম্প স্থাপন

বর্মাছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
লক্ষ্মীছড়ির বর্মাছড়িতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলাকাবাসীর বিক্রি করা কাঠ জব্দ করেছে, যার মূল্য এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা। এর ফলে এই ব্যবসার সাথে জড়িত বাঙালি ব্যবসায়ীরা প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানা গেছে, কারণ তারা ইতিমধ্যে জব্দ গাছের দাম পরিশোধ করে ফেলেছে।
একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপনকে কেন্দ্র করে বর্মাছড়িতে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা গত ৩ সপ্তাহ ধরে তাদের কেনা কাঠগুলো নিয়ে যেতে পারেনি। যদিও প্রতি সপ্তাহে তারা পাহাড়ি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কাঠগুলো কিনে সমতলে চালান করে থাকে।
এলাকার পাহাড়ি ব্যবসায়ী পুতিন্দ্র চাকমা আটক গাছগুলো ছেড়ে দেয়ার জন্য শুকনাছড়ি সেনা ক্যাম্পের এক সেনা কমান্ডারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেও সেনারা এখনও গাছগুলো ছেড়ে দেয়নি।
পুতিন্দ্র চাকমা বলেন, জব্দকৃত গাছগুলো রিজার্ভ ফরেস্টের বা বন বিভাগের গাছ নয়; এগুলো হলো পাহাড়ি গ্রামবাসীদের বাগানের গাছ। এই অঞ্চলে পাহাড়িরা জীবন জীবিকার জন্য গাছ ও বাঁশের ওপর নির্ভরশীল। গাছ-বাঁশ বিক্রি করতে না পারলে তাদেরকে উপোষ করতে হয়।
অন্যদিকে বাঙালিরা গাছ-বাঁশের ব্যবসা করে কিছু আয় উপার্জন করে সংসার চালান। তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এখানে পাহাড়ি ও বাঙালি একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ফলে আটক গাছগুলো ছেড়ে দেয়া না হলে বাঙালি ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর গাছগুলো বিক্রি করে টাকা না পেলে আগামী সপ্তাহে তারা আর পাহাড়িদের কাছ থেকে কাঠ কিনতে পারবেন না। ফলে এতে পাহাড়িরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অর্থাৎ কাঠগুলো জব্দ করার ফলে পাহাড়ি বাঙালি উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সেনাদের বর্মাছড়ি ত্যাগ
আজ ভোর ৫টার দিকে বর্মাছড়িতে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের ৭৫ জনের সর্বশেষ দলটি এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তারা বর্তমানে বর্মাছড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে উগুদোছড়িতে গিয়ে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গতকাল ২৫ জনের একটি দল বর্মাছড়ি ছেড়ে যায়। তবে বর্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলেও, এলাকায় সেনা উপস্থিতি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
বর্তমানে বিনাজুরিতে ১০০ জন সেনা সদস্য অবস্থান করছে। লক্ষ্মীছড়ি জোনের সিও খিরাম ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে চলমান সেনা অপারেশন তত্ত্বাবধান করছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

ক্যাম্প স্থাপন: জেএসএস সন্তু গ্রুপের চক্রান্ত
নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সিএইচটি নিউজকে বলেন, বর্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি আসলে জেএসএস সন্তু গ্রুপের একটি চক্রান্ত। তারা আর্মিদের দিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফকে ঘায়েল করতে বর্মাছড়িতে একটি ক্যাম্প স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে।
তিনি বলেন, সন্তু গ্রুপের লোকজন প্রতিদিন সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইকে ইউপিডিএফ সম্পর্কে মিথ্যা, বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে তাদের কান ভারী করে থাকে। আর সেনারা তাদের দেয়া সেই তথ্য বিচার বিশ্লেষণ না করে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে এবং তাদের কথামত কাজ করে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের সাথে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
উক্ত পর্যবেক্ষক বলেন, সন্তু লারমা হলেন নীতি আদর্শ বিবর্জিত একজন ঝানু খেলোয়াড়। পাহাড়িদের মধ্যে তিনিই একমাত্র নেতা যিনি একসাথে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীন সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করছেন। গত ২৭ বছরে বাংলাদেশে হরেক রকমের সরকারের উত্তান ও পতন ঘটেছে। কিন্তু সন্তু লারমার গদি কোনদিন হাতছাড়া হয়নি। এমনকি কোন সময় তা নড়বড়েও হয়নি। তিনি প্রত্যেক সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে ছেড়েছেন। কোন সরকার তাকে গদি থেকে নামাতে পারেনি।
বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী মনে করে তারা সন্তু লারমাকে ব্যবহার করে জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংস করছেন। কিন্তু তারা জানে না, সন্তু লারমা কত বড় ধূর্ত। তিনিও যে সেনাবাহিনী ও সরকারকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন তা তারা খেয়াল করে বলে মনে হয় না।
তবে সব কিছুর একটা সীমা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যতই ঝানু হোক কেউ সব সময় ধোকা দিয়ে চলতে পারে না। সন্তু লারমার শেষ পরিণতি ভালো হবে না। তার সুবিধাবাদী নীতি তার জন্য সাময়িকভাবে সুফল দিলেও, ইদানিং তা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে। চূড়ান্ত বিচারে সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা (Honesty is the best policy) এই নীতিই সঠিক।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
