বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাক আগ্রাসন দিবসে আলোচনা সভা

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি ।। ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্র ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাক (পাকিস্তান) আগ্রাসনের ৭৪ বছর উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২০ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার ‘তথাকথিত ‘দেশ ভাগের’ বলী পাহাড়িদের প্রকৃত ঘটনা জানতে দিন’ নব্য পাক হানাদারদের দৌরাত্ম্য রোধে ছাত্র-জনতা এক হোন, লড়াই সংগ্রামে জোরদার করুন” এই স্লোগানে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ)-এর বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি রত্নজ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য সুজন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক নিরোধ চাকমা ও রিয়েল চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা ও ইউপিডিএফ সংগঠক প্রান্তিক চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সভাপতি দয়া সোনা চাকমা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি সমাহার চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার নেতা রিপন চাকমা।
সভায় বক্তরা বলেন, ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গৃহীত মোতাবেক দ্বি-জাতিত্তত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলমসূহ নিয়ে পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অমুসলিমদের নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হয়। সে সময়ে শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান রাষ্ট্রে যোগ দিতে চায়নি।
তারা বলেন, দেশ ভাগের সময় তৎকালীন জনসমিতির সাধারণ সম্পাদক স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজধানী রাঙ্গামাটিতে ব্রিটেনের ইউনিয়ন জ্যাক এর পরিবর্তে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তৎকালীন ইংরেজ জেলা প্রশাসক কর্ণেল. জি.এল.হাইড নিজেও উক্ত পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পতাকায় স্যালুট করেন। পরে কর্ণেল হাইড নিজের দপ্তরেও আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। অন্যদিকে বান্দরবান সদরে রাজ পরিবারের উদ্যোগে উত্তোলিত হয় বার্মার পতাকা।
বক্তারা আরো বলেন, ভারত-পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হওয়ার দুদিন পর ১৭ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম অংশটি পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে দিয়ে ম্যাপে প্রদর্শিত হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরবর্তীতে ২০ আগস্ট পাকিস্তান বেলুচ রেজিমেন্ট এক সশস্ত্র আগ্রাশন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান থেকে নামিয়ে দেয় স্থানীয় অধিবাসীদের উত্তোলিত পতাকা। সূচনা হয় আগ্রাসী অপশক্তির দখলদারিত্বের নতুন ইতিহাস। এই দখলদারিত্বের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের পর পাকিস্তানি শাসকরা যে শোষণ-নির্যাতনের জোয়াল পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল তা আজ ৭৪ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও জারি রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, ২০ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের জন্য একটি অভিশপ্ত দিন বা কালো দিবস। ১৯৪৭ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী বেলুচ রেজিমেন্ট সশস্ত্র আগ্রাসনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্কা গুড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে জোর-জবরদোস্তিমূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
বক্তারা বিশ্বের বুকে সম্মান-মর্যাদার সহিত মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলকে সংগ্রামী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।