বাঘাইছড়িতে প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবস পালন, লড়াই-সংগ্রামে অবিচল থাকার শপথ গ্রহণ

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার-এর ৯৩তম আত্মাহুতি দিবস উপলেক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও নারী আত্মরক্ষা কমিটি।
আজ মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে “অগ্নিযুগের বীর কন্যা প্রীতি লতা তোমায় স্যালুট, পাহাড়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের আমরাও একেক জন প্রীতিলতা হতে প্রস্তুত” এই ব্যানার শ্লোগানে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদের সম্মানে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ আনুষ্ঠানিকতা পালন, লড়াই-সংগ্রামে অবিচল থাকার শপথ গ্রহণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সকাল ৮:৩০টায় বীরকন্যা প্রীতিলতাসহ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ বীরদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে চৌকস টিমের মাধ্যমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।


এতে গণসংগঠনের পক্ষ থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি সুখী চাকমা, পার্বত্য নারী সংঘের বাঘাইছড়ি কমিটির সভাপতি অমিতা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ইমন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি শুক্র চাকমা, নারী আত্মরক্ষা কমিটির বাঘাইছড়ি উপজেলা আহ্বায়ক রুনা চাকমা এবং ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে বাঘাইছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অক্ষয় চাকমা, সাজেক গণঅধিকার ও ছাত্র জনতার সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাবুধন চাকমা, কার্বারি এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নতুন জয় চাকমা, ভুমিরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে জ্যোতিলাল চাকমা ও চিত্তি ছ’ চাকমা এবং জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে সাজেক ইউপি সদস্য সুমিতা চাকমা, পরিচয় চাকমা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে শহীদদের স্মরণে বিউগলের সুরে স্যালুট প্রদান ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এরপর হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা কমিটির সদস্য বিশাখা চাকমা উপস্থিত সকলকে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে অবিচল থাকার শপথ নামা পাঠ করান।
পরে ৯:৩০টার সময় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নারী আত্মরক্ষা কমিটির বাঘাইছড়ি উপজেলা আহ্বায়ক রুনা চাকমার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পরানী চাকমার সঞ্চালনায় বীরকন্যা প্রীতিলতার জীবনী পাঠ করেন জারুলছড়ি বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সুমিকা চাকমা।

সভায় বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি সুখী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক অনুপম চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ইমন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উজ্জলা চাকমা ও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ৩৬ নং সাজেক ইউপি সদস্য পরিচয় চাকমা, সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবুধন চাকমা ও সাজেক কারবারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমা।
সুখী চাকমা বলেন, অধিকার আদায়ের লক্ষে আমাদেরও প্রীতিলতার মতো সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে। পাহাড়ে যে হারে মা-বোনদের ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া আর কোন পথ নেই।
অনুপম চাকমা বলেন, ব্রিটিশ উপনিবশিক শাসনের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ যেভাবে রুঁখে দাঁড়িয়েছিল সেভাবে আমাদেরও শাসকশ্রেণীর অন্যায়-অবিচার, নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রীতিলতা নিপীড়িত জনগণের লড়াই-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইমন চাকমা বলেন, জাতীয় দুর্দিনে কোন ছাত্র-যুব সমাজ অথর্ব হয়ে থাকতে পারে না। অধিকার আদায়ে নারী-পুরুষ সমানভাবে লড়তে হবে।
উজ্জলা চাকমা বলেন, প্রীতিলতা নিপীড়নমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনের প্রতীক। প্রীতিলতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নারী সমাজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরিচয় চাকমা বলেন, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে নারী-পুরুষ এক সাথে লড়তে হবে। আমাদের ভিটে মাটি রক্ষার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হবে।
নতুন জয় চাকমা বলেন, যে লড়তে জানে সে বাঁচতেও জানে। পাহাড়ে টিকে থাকতে হলে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
বাবু ধন চাকমা বলেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা আত্মহতি দিবসে আমি গভীরভাবে স্মরণ করছি তাঁর আত্মোৎসর্গের কথা। তিনি আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে শিখিয়ে গেছেন নারীদের সংগ্রামের পথ চলা। আমি মনে করি জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে নারীদের ভূমিকা অতুলনীয়। তাই আমাাদের নারীদের, মা-বোনদের সংগ্রামী চেতনা ধারণ করে জাতীয় অধিকারের জন্য সোচ্চার হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রীতিলতা তাঁর উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে পারতেন, কিন্তু তা না করে তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত নারী হয়ে তিনি দেশ ও জাতির জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য জীবন দিয়েছেন। তাই আমরা আজ তিরানব্বই বছর পরেও তাঁকে স্মরণ করছি। তিনি যদি জাতি ও দেশের জন্য নিজের জীবনকে আত্মবলিদান না দিতেন তাহলে তাকে কেউ মনে রাখতো না, নারীরা সংগ্রাম থেকে আরো পিছিয়ে থাকতো।
তিনি উপস্থিত নারীসহ উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মবলিদান থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনারা নিজেদের ছেলে-মেয়েদের আন্দোলন সংগ্রামে বাধা না দিয়ে উৎসাহিত করুন, যাতে তারা দেশ ও জাতিকে নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্ত করতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে প্রীতিলতার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ চালানো হয়। অভিযান শেষে ফেরার সময় তাঁর গায়ে একটি গুলি লাগে। ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কায় তিনি নিজের সঙ্গে থাকা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন তিনি। তবে বাংলাদেশে ২৪ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।