বান্দরবানের রুমায় ৫ম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার

0

সামাজিক বিচারে ৫০ হাজার টাকা জরিমানায় মীমাংসার চেষ্টার অভিযোগ!


বান্দরবান, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ৫জন মারমা যুবক মিলে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকী দু’জন এখনো পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই মারমা সম্প্রদায়ের।

গ্রেফতার তিনজন হলেন- ক্যসাইওয়ং মারমা (১৯), ক্যহ্লাওয়ং মারমা (২২) ও উহাইসিং মারমা (২৩)। তারা পাইন্দু ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা।

গত ৮ আগস্ট ২০২৫ রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটে। তবে প্রথমে এটি প্রকাশ হয়নি। পরে সামাজিক ‍বিচারে ৫০ হাজার টাকা জরিমানায় ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তা প্রকাশ পায়।  

এ ঘটনায় স্থানীয় সামাজিক নেতাদের সালিশি বিচারে জড়িতদের জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

রুমা থানার ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী বলেন, “ঘটনা ১১ দিনে আগের হলেও বুধবার (২০ আগস্ট) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এরপর রুমা থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালায়। জড়িতদের পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

বুধবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে পাড়াবাসীদের বরাতে রুমা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শৈহ্লাচিং মারমা সাংবাদিকদের বলেন, “৮ আগস্ট রাতে পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা শৈহাইনু মারমা প্রথমে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি তার বন্ধুদের মধ্যে জানাজানি হলে পরদিন অপর চার বন্ধু উহাইসিং মারমা, ক্যহ্লাওয়ং মারমা, ক্যসাইওয়ং মারমা ও চহাই মারমা মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাড়ার কমিউনিটি ক্লিনিকের পেছনের সেগুনবাগানে নিয়ে যায়।

“সেখানে তাকে রাত সাড়ে ৯টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত দলবেঁধে ধর্ষণ করে। বিষয়টি এতদিন ধামাচাপা ছিল। পরে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বিষয়টি পরিবারকে জানালে এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়।”

শৈহ্লাচিং বলেন, “এ পরিস্থিতিতে ১৯ আগষ্ট পাইন্দু মৌজার হেডম্যানের বাড়িতে একটা সালিশের আয়োজন করা হয়। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গংবাসে মারমা ও পাড়াপ্রধান কারবারী থোয়াইসাখই মারমাও উপস্থিত ছিলেন। সামাজিক বিচারে জড়িত পাঁচ জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীকে চিকিৎসার খরচ হিসেবে দেওয়ার কথা বলা হয়।”

তবে ইউপি সদস্য গংবাসে মারমা ভুক্তভোগীর অভিভাবক ও পাড়াবাসীর দাবির মুখে সামাজিক বিচারে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন বলে জানান সাংবাদিক শৈহ্লাচিং মারমা।

ভুক্তভোগীর ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, তাদের পাড়ায় কোন সরকারি স্কুল ছিল না। হেডম্যান পাড়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাড়া থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। তার কারণে সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আবাসিক ধরনের একটা হোস্টেলে রেখে লেখাপড়া করানো হচ্ছিল। তার মধ্যে মেয়ের জীবনে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। অপরাধীদের তার শাস্তি পেতে হবে।

ধর্ষণের মত অপরাধীদের সামাজিক বিচারের নামে জরিমানা করে কেন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে বান্দরবান হেডম্যান-কারবারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উনিহ্লা মারমা বলেন, “ধর্ষণের মত ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা কোনভাবেই সামাজিক বিচার হতে পারে না। তারা হয়ত মনে করেছে, সবাই একই পাড়াবাসী। কোন না কোনভাবে সবার আত্মীয়।

“একটা সিরিয়াস অপরাধের ঘটনাকে ভুল হিসেবে বিবেচনা করেছে। কিন্তু ধর্ষণের মত অপরাধের ঘটনাকে সামাজিকভাবে বিচার করতে গিয়ে তারাও অপরাধ করে ফেলেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদেরও শাস্তি হওয়া দরকার। তা নাহলে এ ধরণের ঘটনা বারবার ঘটবে।”

ওসি সোহরাওয়ার্দী বলেন, বাকি দুইজন এখনও পলাতক রয়েছে। তাদেরকেও গ্রেফতার করা হবে।

* তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More