বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান: থানচি সদরে ১১ পরিবারের আশ্রয় গ্রহণ
বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের কারণে আতঙ্কে দীর্ঘ দিন ধরে বনে জঙ্গলে পালিয়ে থাকা ১১ পরিবার অবশেষে থানচি উপজেলা সদরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
আজ রবিবার (২৮ মে ২০২৩) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১১ পরিবারের ৩২ জন সদস্য থানচি সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। এদের মধ্যে পুরুষ ১০, নারী ১৩ ও শিশু ৯ জন রয়েছেন। আশ্রয় নেয়া ১১ পরিবার সকলে রুমা উপজেলা ৩নং রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাকলাই পাড়ার বাসিন্দা। পরে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয় বলে জানা গেছে।
জানা যায়, কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চলার কারণে গোলাগুলি ও নির্যাতন-হয়রানির আতঙ্কে বাকলাই পাড়ার ওই ১১ পরিবার দীর্ঘ নয় মাস ধরে বনে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে খেয়ে, না খেয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছিলেন। এ বিষয়ে তারা একাধিকবার বিভিন্ন মহলে সহযোগিতা চেয়েও পাননি। অবশেষে গতকাল (শনিবার) সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রোর সাথে তারা যোগাযোগ করলে তার সহযোগিতায় উক্ত ১১ পরিবারের লোকজন থানচি সদরে চলে আসে এবং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন।
বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া বাকলাই পাড়ার প্রধান (কার্বারি) থংলিয়াত বম বলেন, আমাদের পাড়ায় মোট ৩৭ পরিবার ছিল। কেএনএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলির কারণে ৬ মাস আগেই ২৬ পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে গিয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানের আশ্রয় নিয়েছে। আমরা ১১ পরিবার কোন রকমে পুরুষরা দিনের বেলা পাহাড়ে জুম ঘরে পালিয়ে থাকতাম। রাতে বৌ বাচ্চাদের রান্না করার খাবার নিয়ে আবার চলে যেতাম। এভাবে অক্টোবর ২০২২ হতে গতকাল (২৭ মে) পর্যন্ত অনেক কষ্টের বিনিময় অনাহারে অর্ধহারে নির্ঘুম সময় পার করছিলাম। আমাদের কষ্টের কথা রাজনৈতিক নেতা ও অনেক জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে শনিবার অনেক কষ্ট করে পাহাড় থেকে মুঠোফোনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো-কে আমাদের জীবনের করুণ পরিস্থিতির বিষয়টি অবগত করা হলে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে আমাদেরকে থানচি সদরে আসার পরামর্শ দেন। তাই আমরা এখানে চলে এসেছি।
রোলরেম বম বলেন, আমাদের সকল পরিবারের গৃহপালিত হাঁস মুরগি গরু ছাগল, গয়াল, শুকর, ধান, ঘরবাড়ি সব রেখে জীবন বাঁচানোর জন্য এখানে এসেছি। পরিস্থিতির শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বাকলাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাওরামতং বম জানান, অক্টোবর ২০২২ হতে অদ্যাবধি স্কুলও বন্ধ, স্কুলে কোন ছাত্র-ছাত্রী নেই। হ য ব র ল জীবন যাপন করছি। কোন সময় বাড়িতে কোন সময় জঙ্গলে খাওয়া-দাওয়ার কোন ঠিক ছিল না।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মুহা: আবুল মনসুর বলেন, আশ্রয়গ্রহণকারীরা পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত থানচি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়প্রার্থীরা অবস্থান করতে পারবে। যতদিন তারা এখানে থাকবে, ততদিন প্রশাসন সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করার কথাও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর (২০২২) অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সেনাবাহিনী বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির দুর্গম এলাকায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ’র বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে সেখানে বহুবার উভয়েল মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ও উভয় পক্ষের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। উক্ত অভিযানের কারণে ৫ শতাধিক লোক এরই মধ্যে ভারতের মিজোরাশে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বর্তমানেও উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে সাধারণ লোকজন প্রতিনিয়ত নির্যাতন, হয়রানি ও হত্যার শিকার হচ্ছেন। গত ৭ এপ্রিল ও ৮ মে দু’ দফায় ১১ জন বম জনগোষ্ঠির লোক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষিত সন্ত্রাসী দ্বারা হত্যার শিকার হন। এমন পরিস্থিতিতে উক্ত তিন উপজেলার দুর্গম পাড়াগুলো থেকে প্রতিনিয়ত লোকজন ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পত্তি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন