বান্দরবানে থেমে নেই ইসলাম ধর্মান্তরকারী চক্রের তৎপরতা, ১৩ ম্রো শিশু উদ্ধার

0
উদ্ধারকৃত ম্রো শিশুরা

বান্দরবান ।।  বান্দরবানে ইসলাম ধর্মান্তরকারী চক্রের তৎপরতা লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে চলেছে। বিনা খরচে থাকা- খাওয়া, লেখাপড়ার খরচের ব্যবস্থা ও আর্থিক সহযোগিতার প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি গরীব, অশিক্ষিত ও সহজ-সরল পাহাড়ি পরিবারের কাছ থেকে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে গিয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ রয়েছে।

গত ২২ জানুয়ারি ২০২১ কক্সবাজারের ‘ঈদগাহ উপজাতীয় মুসলিম কল্যাণ সংঘ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩ ম্রো শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।

একদল সচেতন ম্রো ছাত্র স্থানীয় এনজিও কর্মী ও সমাজ কর্মীদের সহযোগিতায় এই শিশুদের উদ্ধার করেন।

উদ্ধারকৃত শিশুরা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের চারটি ম্রো গ্রামের বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অং ওয়াই পাড়া থেকে ২ জন, সিংরাও পাড়া থেকে ৪ জন, মেনপাত পাড়া থেকে ৬ জন ও পাকমা পাড়া থেকে ১ জন রয়েছে।

উদ্ধার হওয়া শিশুরা হল- (১) মেন অং ম্রো, ১০ বছর, পিতা-অং ওয়াই ম্রো, গ্রাম-অং ওয়াই পাড়া; (২) ইংয়ং ম্রো, ৯ বছর, পিতা-মাংয়া ম্রো, গ্রাম-ঐ; (৩) ডিমওয়াই ম্রো, ৭ বছর, পিতা-মেনক ম্রো, গ্রাম-সিংরাও পাড়া; (৪) কেনওয়াই ম্রো, ১০ বছর, পিতা-পাদুই ম্রো, গ্রাম-ঐ; (৫) কাইনপা ম্রো, ১০ বছর, পিতা-লেবয় ম্রো, গ্রাম-ঐ; (৬) মেনওয়াই ম্রো, ৮ বছর, পিতা-মাংপুং ম্রো, গ্রাম-ঐ; (৭) লেংতুই ম্রো, ৮ বছর, পিতা-সাংরেং ম্রো, গ্রাম-মেনপাত পাড়া; (৮) মিস পাওরিং ম্রো, ৭ বছর, পিতা-কারা ম্রো, গ্রাম-ঐ; (৯) মিস তাংপাও ম্রো, পিতা-খামলাই ম্রো, গ্রাম-ঐ; (১০) সুইপিন ম্রো, ৮ বছর, পিতা-লাউলুং ম্রো, গ্রাম-ঐ; (১১) খিনপ্রে ম্রো, ৯ বছর, পিতা-কাইনওয়াই ম্রো, গ্রাম-ঐ; (১২) ওয়েইরিং ম্রো, ৮ বছর, পিতা-সিংরেং ম্রো, গ্রাম-ঐ; (১৩) য়ংনৈং ম্রো, পিতা-কাংলাফা ম্রো, গ্রাম-পাকমা পাড়া।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিনা খরচে থাকা, খাওয়া, লেখাপড়ার খরচ এর ব্যবস্থা ও আর্থিক সহযোগিতার প্রলোভন দেখিয়ে ইসলামে ধর্মান্তরকারী এই চক্রটি দরিদ্র ও সহজ-সরল ম্রো পরিবারের কাছ থেকে এই শিশুদের নিয়ে যায়। পরে তারা বিভিন্ন মাদ্রাসায় রেখে এই অবুঝ শিশুদের আযানসহ ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শিক্ষা দিয়ে থাকে। শিশুদের পড়ানো হয় ইসলামী পোশাক। এক পর্যায়ে এই শিশুদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘জেএমবি শামীম’ নামে পরিচিত ডা: মো: ইউসুফ আলী নামে এক ব্যক্তি এই ধর্মান্তরকরণ চক্রের অন্যতম হোতা।

অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী পাহাড়িদেরকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গৃহ নির্মাণ, গরু-ছাগল পালন, সুদ-মুক্ত ঋণ ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে বান্দরবান জেলায় ধর্মান্তরকরণ চলছে। বান্দরবান জেলায় ‘উপজাতীয় মুসলিম আর্দশ সংঘ’,‘উপজাতীয় মুসলিম কল্যাণ সংস্থা’ ও ‘উপজাতীয় আর্দশ সংঘ বাংলাদেশ’ ইত্যাদি সংগঠনের নাম দিয়ে জনবসতিও গড়ে তোলা হয়েছে এবং এসব সংগঠনের মাধ্যমে পাহাড়িদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের কাজ চালানো হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আলিকদমসহ বান্দরবানে পাহাড়িদের ইসলামে ধর্মান্তরিতকরণের সাথে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে সক্রিয় ও তৎপর হিসেবে দেখা গেছে ডা: ইউসুফ আলী নামের ঐ বহিরাগত চিকিৎসক ও আলিকদম উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা একে এম আইয়ুব খানকে। তারা গরীব-অশিক্ষিত পাহাড়িদের অভাব-অনটনের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, বিগত ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় এক মাদ্রাসায় পাচার করার সময় পুলিশ বান্দরবান শহরের ‘অতিথি আবাসিক হোটেল’ থেকে চার পাহাড়ি শিশুকে উদ্ধার করে। এর পূর্বে ২ জানুয়ারি ২০১৩, পুলিশ ঢাকার সবুজবাগ থানাধীন আবুযোর জিফারি মসজিদ কমপ্লেক্স নামের এক মাদ্রাসা থেকে ১৬ পাহাড়ি শিশুকে উদ্ধার করে। শিশুদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। ২০১২ সালের জুলাই মাসেও গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ১১ জন ত্রিপুরা শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে পুলিশ কর্তৃক কেবল বান্দরবান শহরের এক মোটেল ‘অতিথি বোর্ডিং’ থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৩৩ শিশুকে উদ্ধার করে। ধানমন্ডী আদর্শ মদিনা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি ও প্রলোভন দেখিয়ে বান্দরবানের থানচি উপজেলা থেকে এই শিশুদের সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

ছোট ছোট এসব ছেলে-মেয়েদেরকে বিভিন্ন কৌশলে পরিবার থেকে নিয়ে ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পিতা-মাতার অজান্তে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো এবং ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার বিষয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রচারিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ চক্রটির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More