বান্দরবানে ৮ বম পাড়াবাসীকে হত্যার প্রতিবাদে কুদুকছড়িতে ইউপিডিএফ-এর বিক্ষোভ

0

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৯ এপ্রিল ২০২৩

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ৮ জন বম পাড়াবাসীকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাঙামাটি সদর উপজেলা ইউনিট।

আজ রবিবার (০৯ এপ্রিল ২০২৩) ২টার সময় প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এরপর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ইউপিডিএফ সংগঠক নির্ণয় চাকমার সভাপতিত্বে ও বিবেক চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক রিপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিপন চাকমা প্রমুখ।

সমাবেশে প্রিয়তন চাকমা বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে নব্যমুখোশ বাহিনীর মতো সশস্ত্র ঠ্যাঙারে গ্রুপ সৃষ্টি করে নারকীয় হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে নব্যমুখোশ-সংস্কারপন্থী সন্ত্রাদীদের দিয়ে অপহরণের পর “দুপক্ষের গোলাগুলি”র নাটক মঞ্চস্থ করে ৮ বম পাড়াবাসীকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এর আগে ২০১৮ সালে এই সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে ও পেরাছড়ায় ৭ জনকে হত্যা করেছিল। তিনি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।

রিপা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশে নারীরা এক ভয়ানক পরিবেশে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশকিছু নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে বান্দরবানে এক গর্ভবতী বম নারীকে সেনা ক্যাম্পে ধরে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।

তিনি বান্দরবানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে সরকারের জাতিগত নির্মুলীকরণ নীতিরই বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন এবং নারী নির্যাতনসহ জাতিধ্বংসের সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান ।

রিপন চাকমা বলেন, সরকার জুম্ম জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নব্যমুখোশ বাহিনীর মতো একের পর এক ঠ্রাঙারে গ্রুপ সৃষ্টি করে খুন, গুম, অপহরণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে। তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরাও রেহায় পাচ্ছে না। বান্দরবানে কথিত ‘সন্ত্রাস’ বিরোধী অভিযানের নামে সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন, গুম অপহরণের মতো ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হচ্ছে। ফলে বম জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকা এখন জনশূণ্য হয়ে পড়েছে। গত ৭ এপ্রিল রোয়াংছড়িতে বম জাতিসত্তার ৮ জনকে হত্যার মাধ্যমে তারা জাতিগত সহিংসতাকে উস্কে দিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ ,অবিলম্বে রোয়াংছড়ি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে হত্যাকাণ্ডে সাথে জড়িত সন্ত্রাসী ও মদদদাতাদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সমাবেশের সভাপতি নির্ণয় চাকমা বলেন, বান্দরবানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীরা ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজার-পেরাছড়ায় ৭ জনকে হত্যা করেছিল। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট এই খুনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ না দিয়ে তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে খুনের কাজে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার পাহাড়ি জনগণের ওপর একদিকে অন্যায় ধরপাকড়, বিচার বহির্ভুত হত্যা, ভূমি বেদখলসহ অন্যায় দমন-পীড়ন জারি রেখেছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে খুন, গুম, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে। সম্প্রতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বিজিবি সদস্যরা সেখানকার তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদের উপর হামলা, নির্যাতন চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে।

তিনি সরকারের মদদে পরিচালিত খুন, গুম, অপহরণ, ধরপাকড়, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনসাধারণেকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে বান্দরবান হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেফতার করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন ।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More