বিজিবি আমাদের জীবন অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে
সিএইচটিনিউজ.কম

দীঘিনালা প্রতিনিধি: ‘বিজিবি আমাদের জীবন অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। আমাদের লেখাপড়া সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিবি আমাদের স্কুলটি বন্ধ করে দিয়েছে, আমাদের ঘরবাড়ী কাঁটা চিকল দিয়ে ঘিরে রেখেছে। বিজিবি আমাদের মা বাবাকে বন্দুক দিয়ে মেরেছে। তারা আমাদের বইপত্র আনতে দেয়নি। তাদের দেখলে আমরা ভয় পাই। স্কুলে যেতে চাইলেও যেতে পারিনা, বিজিবিকে ভয় লাগে। তারা বন্দুক হাতে করে থাকে। রমজান ছুটির পর সব স্কুল খুলেছে, পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের স্কুলে খোলেনি। আমাদের স্কুলে যেতে খুব ইচ্ছে করে কিন্তু যেতে ভয় হয়। জানিনা বিজিবি কখন চলে যাবে। কখন স্কুলে যেতে পারব, কখন আবার পড়া লেখা শুরু করতে পারব কখন বা বাড়ীতে ফিরে যেতে পারব।’
কথাগুলো বলছিল দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকায় বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়নের কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২নং বাঘাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র সুজীব চাকমা, ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র সুপান্ত চাকমা এবং সন্তোষ কুমার কার্বারীর নাতনি ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী বৈশাখী চকমা।
আজ ১৩ আগষ্ট বুধবার সরেজমিন দেখতে গেলে যত্ন কুমার কার্বারী পাড়া থেকে বিজিবি কর্তৃক নিজ বসতভিটা, জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মা বাবার সাথে আশ্রয় নেয়া শিশুরা ভাঙা গলায় এসব অভিযোগ করে।
এ সময় দেখা যায়, রমজানের ছুটি শেষে সব স্কুল খুললেও বন্ধ রয়েছে ২নং বাঘাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। স্কুলে যেতে না পেরে শিশুরা দাংগুলি, মারবেল খেলায় মশগুল রয়েছে। বিদ্যালয়টি না খোলার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে খুবই দুঃচিন্তার মধ্যে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেবতরু চাকমা এ বিষয়ে বলেন, গত ১৪ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার সময় ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সশস্ত্রভাবে আমাদের গ্রামে আবস্থান নেয় এবং যত্ন কুমার কার্বারী পাড়া ও শশীমোহন কার্বারী পাড়া কাটাতার দিয়ে ঘেরা দেয়া শুরু করে। এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ জানালেও তারা তোয়াক্কা করেনি। ১০ জুন গ্রামের কয়েকজন নারী তাদের জায়গাতে কলা চারা রোপন করতে গেলে বিজিবি বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বিজিবি পুলিশ গৃহনির্মাণ কাজে নিয়োজিত সেটেলার বাঙালিদের সাথে নিয়ে লোহার রড, লাঠিসোটা ও বন্দুকের বাট দিয়ে অতর্কিতে আক্রমন করে। রাবার বুলেট টিয়ার সেলও নিক্ষেপ করে। এতে ৭০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধসহ ১৮ জন নারী পুরুষকে গুরতর আহত হয়। এলাকার মুরুব্বী এবং লোকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে কেউ মামলা নেয়নি। উল্টো বিজিবি ১১১ জনের নাম উল্লেখ করে ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে দীঘিনালা থানায় হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ৪ জন নারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরন করে। তাদের মধ্যে একজন কিশোরী রয়েছে। অবশ্য গ্রেপ্তরকৃতরা বর্তমানে জামিনে রয়েছে। বিজিবির দায়ের করা মিথ্যা মামলায় তিন জন মৃত ব্যক্তিকেও আসামী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হামলার পর পর বিজিবি পাকিস্তান আমলে স্থাপিত ২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গাসহ আমাদের গ্রাম দুটি কাটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলে। তখন থেকে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। এবং ১০৫জন ছাত্র ছাত্রীর ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমাদের ছেলে মেয়েরা এখন লেখা পড়ার বদলে দাংগুলি, মারবেল খেলা, দলা খেলা, ও চামুক খেলা খেলে দিন কাটায়। জানিনা আমরা কখন নিজ জায়গায় ফিরে যেতে পারবো এবং আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে, শুরু করতে পারবে নতুন করে লেখাপড়া।
অভিভাবক মৃনাল কান্তি চাকমা এ ব্যাপারে বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষা মন্ত্রী বরাবর আমরা বিজিবির কবল হতে স্কুলটি পুনরুদ্ধারের জন্য আবেদন করলেও তারা আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। তাই আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই হাতাশার মধ্যে রয়েছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অচিন্ত বিকাশ চাকমাকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাবু চন্দ্র রঞ্জন চাকমার নিকট এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিজিবি ব্যাটেলিয়ন প্রত্যাহারপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়ি পরিবারগুলোকে নিজ নিজ জায়গায় পুনর্বাসন করা হলে সব সমস্যা সমাধান হবে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার সাধন চাকমা বলেন, নতুন করে আর কি বলবো ৫১ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া ছাড়া এ সমস্যা সমাধানের কোন বিকল্প নেই।
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।