বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে রামগড়ে নানা কর্মসূচি পালিত

রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
“অগ্নিযুগের বীরকন্যা প্রীতিলতা তোমায় স্যালুট, পাহাড়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমরাও একেকজন প্রীতিলতা হতে প্রস্তুত” এই শ্লোগানে খাগড়াছড়ির রামগড়ে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী অগ্নিযুগের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, লড়াই-সংগ্রামে অবিচল থাকার শপথ গ্রহণ, কুচকাওয়াজ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও নারী আত্মরক্ষা কমিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সকাল ১০টায় বীরকন্যা প্রীতিলতা ও সকল আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে শপথ গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। পুরো মাঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের অঙ্গীকারে উজ্জীবিত স্লোগান।

পরে বীরকন্যা প্রীতিলতা ও অন্যান্য বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন প্রেমালি ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে, এ লড়াইয়ে প্রত্যেকে একেকজন প্রীতিলতার মতো সাহসী ভূমিকা পালনের দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করেন। শপথনামা পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা।

পরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেত্রী গুলোমনি চাকমা। সভায় সঞ্চালন করেন সংগীতা চাকমা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেন্টিনা চাকমা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা সভাপতি তৈমাং ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা সভাপতি ধনু ত্রিপুরা, ইউপিডিএফের রামগড় ইউনিটের সংগঠক সংগীত ত্রিপুরা।
নীতি চাকমা বলেন, আমরা জানি—নারী, শিশু, যুব সমাজের শক্তি ছাড়া কোনো সমাজ পূর্ণতা পায় না। প্রীতিলতার সাহসিকতা আমাদের দেখিয়েছে যে, যদি সঠিক সংকল্প ও সাহস থাকে তবে যে কোন বাধা অতিক্রম করা যায়। তার আত্মত্যাগ আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, নিজের শক্তিতে বিশ্বাস রাখতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের ওপর প্রতিনিয়ত নিপীড়ন-নির্যাতন, ধর্ষণ, ভূমি বেদখলের ঘটনা ঘটছে। তাই আমাদের কারোর আর বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।

তৈমাং ত্রিপুরা বলেন, আমাদের পাহাড়ের মানুষ প্রতিদিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। বীরকন্যা প্রীতিলতার জীবন আমাদের দেখিয়েছে যে, ন্যায়ের জন্য লড়াই কখনও থামে না। তার আত্মত্যাগের মূল্য আমরা প্রতিদিন অনুভব করি। আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করছি- প্রতিটি অসমাপ্ত স্বপ্ন, প্রতিটি ন্যায়ের দাবি পূরণের জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। শুধু নিজেদের স্বার্থ নয়, আমরা আমাদের জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের জন্য দৃঢ়তার সাথে লড়াই চালিয়ে যাবো।
ধনু ত্রিপুরা বলেন, প্রতিটি যুবক ও যুবতীকে পাহাড়ের অধিকারের স্বপ্ন লালন করতে হবে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরকন্যা প্রীতিলতাদের আত্মত্যাগ আমাদের দেখিয়েছে যে সংগ্রামই অধিকার আদায় ও সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র পথ। আমাদেরও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির জন্য লড়াই-সংগ্রাম বেগবান করতে হবে, অন্যায় শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেদ হবে।
তিনি ছাত্র-ছাত্রীসহ নারী-পুরুষকে প্রীতিলতার আত্মবলিদানের চেতনায় শাণিত হয়ে সাহসিকতার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
সংগীত ত্রিপুরা বলেন, প্রীতিলতা শুধু বীর নারী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সাহস ও সংকল্পের প্রতীক। তার আত্মবলিদান আমাদের শেখায় যে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজ ও দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে। তার আত্মত্যাগের মূল্য শুধু ইতিহাস নয়, বরং এটি আমাদের প্রতিদিনের সংগ্রামকে শক্তিশালী করে। তাই আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুবক-নারী সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যে, যতই দমন-পীড়ন চালানো হোক না কেন পাহাড়ের নিপীড়ন মানুষের জন্য আমাদের লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। লড়াই-সংগ্রামই নিপীড়ন থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।

সভাপতিত্ব বক্তব্যে গুলোমনি চাকমা বলেন, আজ আমরা সকলেই একত্রিত হয়েছি বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মবলিদান থেকে অনুপ্রেরণা নেয়ার জন্য। এই আয়োজন কেবল তাকে স্মরণ করা নয়, এর মাধ্যমে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে প্রীতিলতার আত্মবলিদান থেকে শিক্ষা নেবো, সাহস সঞ্চার করবো। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের পাহাড়িদের ওপর যে অন্যায় দমন-পীড়ন চলছে তার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই সংগ্রাম করতে হবে। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি তবলা পাড়ায় জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, আগামীতেও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি জায়গায় এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।