বীর শহীদেরা অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পথ প্রদর্শক : অমল ত্রিপুরা

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর সভাপতি অমল ত্রিপুরা বলেছেন, জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের যারা আত্মোৎসর্গ করেছেন, শহীদ হয়েছেন তারা আন্দোলনের পথ প্রদর্শক এবং আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁদেরকে নিপীড়িত জনগণ যুগে যুগে স্মরণ করবে।
আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর ২০২৫) বিকাল ৫টায় ঢাকায় তোপখানা রোডে একটি হল রুমে ‘শহীদ ভরদ্বাজ মুনি চাকমার আত্মবলিদানের ৩৩তম বার্ষিকীতে’ পিসিপি’র আয়োজিত স্মরণ সভায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই কথা বলেন।
“স্বাধিকার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদগণই আমাদের প্রেরণার উৎস” এই স্লোগানে আয়োজিত স্মরণসভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক সূর্য চাকমার সভাপতিত্বে ও অংসালা মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, পিসিপির সভাপতি অমল ত্রিপুরা ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অর্ণব চাকমা প্রমুখ।
সভা শুরুতে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি চাকমাসহ সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় অমল ত্রিপুরা, সত্তর বছর বয়সী ভরদ্বাজ মুনি চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রথম শহীদ। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯২ সালে ১৩ অক্টোবর দীঘিনালায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আয়োজিত ছাত্র-গণসমাবেশে সেনাবাহিনীর মদদে সেটলার সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি শহীদ হন। আজ ৩৩ বছর হলেও ভরদ্বাজ মনি চাকমার হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার বাঙালি কর্তৃক সংঘটিত ডজনের অধিক গণহত্যার বিচার হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অতীত থেকে একটা বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রচলন রয়েছে। যার ফলে পাহাড়ি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে অনাস্থা, সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি শিক্ষার্থী গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সকলকে গ্রেফতার করা হয়নি, বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করেনি। বরং সে ঘটনা ধামাচাপা দিতে শাসকগোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে। বিচারে দাবি নিয়ে যারা আন্দোলন করেছে সেনা-সেটলার বাঙালিরা তাদের ওপর হামলা করেছে, সেনাবাহিনী গুলি করে ৩ জনকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শহীদ ভরদ্বাজ মুনি, বিপুল, সুনীল, লিটন, তপন, এলটন, ক্যজাই, মিঠুন, অনিমেষ, রূপকসহ অসংখ্য সহযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন। সকল শহীদদের আত্মমর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে আগামী দিনের লড়াইকে বেগবান করতে হবে, এগিয়ে নিতে হবে।
আলোচনায় জিকো ত্রিপুরা বলেন, নব্বই দশকে পিসিপির নেতৃত্বে উত্তাল আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে ১৩ অক্টোবর অর্থাৎ ভরদ্বাজ মুনি যে সময় শহীদ হয়েছেন সে প্রোগ্রামে আমিও অংশগ্রহণ করেছিলাম। পিসিপির সম্মেলনে সেনা-সেটলার বাঙালিরা অতর্কিত আক্রমণে সেদিন ভরদ্বাজ মুনি শহীদ হন।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে সফল বিপ্লবীরা সঠিক নীতি, আদর্শ অবিচল থেকে লড়াই সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন এবং শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তুলতে পেরেছিলেন বলে তা সফল করতে পেরেছেন। আমাদেরও সঠিক নীতি, আদর্শে প্রতি অটল থেকে ছাত্র-জনতাকেত সংগঠিত করতে হবে।
অর্ণব চাকমা বলেন, পাহাড়ের আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা করলে ভরদ্বাজ মুনিসহ সকল শহীদেরা এই আন্দোলনের অংশিদার। তাদের অবদান, স্মৃতি, স্বপ্নকে ধারণ করে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল শহীদদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।