ভাইবোনছড়ায় ছাত্র-জনতার ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে যেভাবে হামলা করেছিল সেনাবাহিনী

0

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর অ্যাকশনের দৃশ্য। ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া।


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

গত ১৭ জুলাই ২০২৫ খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নে ৬ জন বাঙালি কর্তৃক ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার-শাস্তির দাবিতে ‌‍‍“সাধারণ শিক্ষার্থী ও যুব সমাজ” এর ব্যানারে ভাইবোনছড়া বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। উক্ত বিক্ষোভ চলাকালে সেনাবাহিনী একদল সদস্য সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে সাংবাদিকসহ অনেকে আহত হন।

যেভাবে হামলা চালায় সেনা সদস্যরা

১৭ জুলাই, সকাল ১১টার দিকে এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, যুব সমাজের লোকজনসহ এলাকার হাজারো ছাত্র-যুব-জনতা ফরেস্টটিলা নামক স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ভাইবোন বাজারের দিকে যায়। মিছিলটি ভাইবোনছড়া বাজার প্রদক্ষিণ করে ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের জন্য সবাই জড়ো হলে তৎমূহুর্তে (সকাল ১১.৩০টা) ভাইবোনছড়া আর্মি ক্যাম্প হতে এক পিকআপ সেনা সদস্য সেখানে উপস্থিত হয়ে অতর্কিতভাবে সমবেত ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ ও লাঠিচার্জ করে ধাওয়া করতে শুরু করে। এতে শিক্ষার্থী-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।  

তবে এতে ব্যানারের সামনে থাকা স্কুল শিক্ষার্থীদের একাংশ সেনা সদস্যদের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। একপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে জনপ্রতিনিধি ও স্কুল শিক্ষকেরা এগিয়ে আসেন। এর কিছু সময় পরে খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন।

এরপর তিনি ভাইবোনছড়া বাজার পর্যবেক্ষণ করে সমাবেশের প্রতিনিধি টিম এবং বিএনপি সদস্যদের নিয়ে ইউপি কার্যালয়ের কক্ষে আলোচনা সভা করেন।

সেনা সদস্যদের নির্যাতনে জখম হওয়া সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরা ও গ্রামবাসী জগৎ শান্তি চাকমা। 

এদিকে, আলোচনা চলাকালীন কয়েকজন সেনা সদস্য ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরা ও সাধারণ গ্রামবাসী জগৎ শান্তি চাকমাকে আঁড়ালে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর অমানুষিকভাবে শারিরীক নির্যাতন চালায়। এসময় সেনা সদস্যরা সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরাকে ছবি তোলার কারণ জানতে চায় এবং ক্যামেরা থেকে ছবিগুলো তাদের সামনে মুছে ফেলতে বাধ্য করে।

বহুক্ষণ পরে তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে সন্দেহ হলে উপস্থিত জনতা সেনাদের হেফাজত থেকে তাাদের দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ সময় সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরা জোন কমান্ডারের কাছে অভিযোগ করলে তিনি অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের শাস্তিস্বরূপ বৃষ্টিতে ভেজার নির্দেশ দেন। অন্যায় নির্যাতনের শাস্তি শুধু এটুকুই!

এছাড়া সেনারা সুনয়ন ত্রিপুরা ও সুরভ ত্রিপুরা নামে দু’জনকেও আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেনাদের হামলা ও নির্যাতনে যারা আহত হয়েছেন

সেনাদের হামলা ও নির্যাতনে আহত হওয়াদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরা, গ্রামবাসী জগৎ শান্তি চাকমা; মুক্তি বাবু ত্রিপুরা, পিতা-কানুংচান ত্রিপুরা; সুনয়ন ত্রিপুরা, গ্রাম-১০ নাম্বার, ভাইবোনছড়া, শিবা ত্রিপুরা, পিতা- হরিপদন ত্রিপুরা ও সুরভ ত্রিপুরা, গ্রাম-রিয়াং পাড়া, ভাইবোনছড়া।

ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে সেনা সদস্যদের এমন হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী ধর্ষকদের রক্ষক কি-না অনেকে সে প্রশ্ন তোলেন।

উল্লেখ্য,  গত ২৭ জুন রথযাত্রার মেলায় অংশ নেওয়ার পর রাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল ওই শিক্ষার্থী। সেখানে গভীর রাতে ছয়জন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় ছাত্রীর আত্মীয়কে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাজিক লজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে ওই ছাত্রী প্রথমে পরিবারকে কিছু জানায়নি। তবে এ ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত ১২ জুলােই বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল মেয়েটি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানায়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দাযের করলে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫) ও এনায়েত হোসেন (৩৫) এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২)। 

মামলার বাকি দুই আসামি হলেন একই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল ইসলাম (২৩)। তাঁরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More