ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে বাঘাইছড়ির মাল্ল্যায় পাহাড়ি গ্রামে হামলা: একটি বাড়িতে আগুন, ৯টি বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট

0

সেটলারদের অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া জগদীশ চাকমার বসতবাড়ি। 

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের বড় মাল্ল্যা পাহাড়ি গ্রামে সেটলার বাঙালিরা হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১টি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ও ৯টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল (২০ অক্টোবর ২০২৫) দিবাগত মধ্যরাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

যার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তিনি হলেন জগদীশ চাকমা-(৬৫), পিতা:-মৃত বগরা চাকমা, গ্রাম- বড় মাল্ল্যা, ৯নং ওয়ার্ড, ৩০ নং সারোয়াতলী ইউনিয়ন।

আর বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-

১। নিল রতন চাকমা (৫২), পিতা-বসু কুমার চাকমা। তার বাড়িটি ভেঙে দেয়া হয় এবং বাড়ির সরঞ্জামাদি সেটলাররা লুট করে নিয়ে যায়।

২। উষা ময় চাকমা (৪৫), পিতা- মৃত বিজয় চাকমা। তার বাড়ি থেকে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল (সোলার), চাল ২ বস্তা, কাপড়-চোপড় ও মুরগী লুট করে নিয়ে যায়।

৩। নিপন চাকমা (৩৫), পিতা-বিজয় চাকমা, সোলার ব্যাটারী ২টি, ৮ ঘোড়া পাম্প মেশিন ১টি, মোবাইল ফোন, স্প্রে মেশিন ১টি ও মটর ১টি লুট করে নিয়ে যায়।

৪। যুদ্ধ মুনি চাকমা(৪৫), পিতা-নিল মোহন চাকমা। তার বাড়ি থেকে সোলার প্যানেল, কাপড়-চোপড় ও ধান ২ বস্তা লুট করে নিয়ে যায়।

৫। শোভার বিজয় চাকমা(৪০), পিতা-মৃত বিদ্যা কুমার চাকমা। তার বাড়ি থেকে সোলার ব্যাটারি ও আসবাবপত্র সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।

৬। সুমতি রঞ্জন চাকমা(৫০), পিতা-মৃত বানিশ্বর চাকমা। তার বাড়ি থেকে ৬ ঘোড়া পাম্ব মেশিন, ধান ২০ বস্তা ও চেয়ার টেবিল লুট করে নিয়ে যায়।

৭। সুশান্ত চাকমা(৩০), পিতা- অজ্ঞাত। তার বাড়ি থেকে আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

৮। পেদা চাকমা(৪০), পিতা-মৃত চন্দ্র সেন চাকমা। তার বাড়িতে ধান ২০ বস্তাসহ কুড়ো/তুষ নষ্ট করে দেয় ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

৯। নিহার বিন্দু চাকমা(৬০), পিতা-মৃত বিদ্যা কুমার চাকমা। তার বাড়ির আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

হামলার সময় সেটলাররা হাড়ি-পাতিলসহ জিনিসপত্র ভাঙচুর ভেঙে দেয়।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৮/৯ মাস আগে লংগদুর সুমন চাকমা ও ঘরহাবা চাকমা নামে দুজনের কাছ থেকে জায়গা ক্রয় করার দাবি করে ৯নং সেটলার পাড়ার বাসিন্দা মো. জজমিয়া ও লংগদুর দিবোরমুখ সেটলার পাড়ার বাসিন্দা মো. সিদ্দিক।

এ বিষয়টি স্থানীয় পাহাড়িরা মেনে নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে এবং এ নিয়ে সেটলার মো. জজমিয়া ও মো. সিদ্দিকের সাথে স্থানীয় পাহাড়িদের উক্ত জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে ৩৭নং আমতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর, ৩০ নং সারোয়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান অতুল বিহারী চাকমা ও মাল্ল্যা সেনা ক্যাম্প কমান্ডারের উপস্থিতিতে উভয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা বৈঠক হয়। এতে উভয়ের মধ্যেকার বিরোধ নিষ্পত্তিরও সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে অন্য কারোর ইন্ধনে সেটলার জজমিয়া ও সিদ্দিক উক্ত সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং রাজনগর বিজিবি জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল মো. আতিকের কাছে তারা ক্রয়কৃত দাবি করা জায়গা ফেরত চেয়ে আবেদন করেন। এতে একতরফাভাবে রাজনগর বিজিবি জোন কমান্ডার তাদেরকে জায়গাটি ভোগদখলে নেয়ার পরামর্শ দেন এবং মাল্ল্যা সেনাক্যাম্প কমান্ডার ওয়ারেন্ট অফিসার মো. তারেককে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করতে নির্দেশ প্রদান করেন।

হামলার সময় সেটলাররা ধানের বস্তা কেটে নষ্ট করে দেয়। 


রাজনগর বিজিবি জোন কমান্ডারের পরামর্শ পেয়ে সেটলার মো. জজমিয়া কয়েকদিন আগে তার ক্রয়কৃত দাবি করা জায়গায় (পাহাড়ি বসতভিটায়) একটি ঘর নির্মাণ করেন।

এদিকে, সমাঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মো. জজমিয়ার এই ঘর নির্মাণের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ৩০নং সারোয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুল বিহারী চাকমা ও ৩৫ নং বঙ্গলতলী চেয়ারম্যান জ্ঞানজ্যোতি চাকমা উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা ও আইন-শৃঙ্খলা সভায় বার বার উত্থাপন করেন। এমনকি তারা খাগড়াছড়ির ডিজিএফআইয়ের প্রধানকেও বিষয়টি অবগত করেন।

কিন্তু প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এমতাবস্থায় গতকাল রাতে পাহাড়ি ও সেটলারদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সেটলার বাঙালিরা সংঘবদ্ধভাবে বড় মাল্ল্যা পাহাড়ি গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

সেটলারদের সংঘবদ্ধ হামলার সময় পাাহড়িরা ভয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এ ঘটনায় এখনো এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা মিলে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More